পাতা:সাহিত্য-সাধক-চরিতমালা পঞ্চম খণ্ড.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২ প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় লড কী আছে, দেশে আমারও একটি লড়কী আছে । আমি তাহারই মুখখানি স্মরণ করিয়া তোমার খোখীর জন্য কিছু কিছু মেওয়? হাতে লইয়া আসি, আমি ত সওদা করিতে আসি না ।” এই বলিয়া সে আপনার ঢিলা জামাটর ভিতর হাত চালাইয়া দিয়া বুকের কাছে কোথা হইতে এক টুকরা ময়লা কাগজ বাহির করিল । বাবু দেখিলেন, কাগজের উপর একখানি ছোট হাতের ছাপ | ফটোগ্রাফ নহে, তেলের ছবি নহে, হাতে খানিকট ভূষী মাখাইয়া কাগজের উপর তাহারই চিহ্ন ধরিয়া লইয়াছে । “কস্তার এই স্মরণ চিহ্নটুকু বুকের কাছে লইয়া রহমৎ প্রতি বৎসর কলিকা তার রাস্তায় মেওয়া বেচিতে আসে–যেন সেই স্বকোমল ক্ষুদ্র শিশু-হস্তটুকুর স্পর্শখানি তাহার বিরাট বিরহী বক্ষের মধ্যে সুধী সঞ্চার করিয়া রাখে ”—ইঙ্গা দেখিয়া মিনির পিতার চক্ষু ছলছল করিয়া আসিয়াছিল । আমাদের চক্ষুষ্ট যে শুষ্ক থাকে, এমন কথা বলিতে পারি না । তখন পিতা মিনিকে ডাকিয়া পাঠাইলেন। সে দিন তাহার বিবাহ । রাঙা চেলি পরা, কপালে চন্দন আঁকা বধূবেশিনী মিনি সলজ্জভাবে আসিয়া দাড়াইল । মিনি চলিয়া গেলে, বৃহমৎ একটা গভীর দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া মাটিতে বসিয়া পড়িল । মনে হইল, তাহার মেয়েটিও ইতিমধ্যে এইরূপ বড় হইয়াছে, তাহার সঙ্গেও আবার নূতন আলাপ করিতে হইবে, তাহাকে ঠিক পূৰ্ব্বের মতন তেমনটি আর পাইবেন না । “সকাল বেলায় শরতের স্নিগ্ধ রৌদ্রকিরণের মধ্যে সানাই বাজিতে লাগিল, রহমং কলিকাতার এক গলির ভিতরে বসিয়া আফগানিস্থানের এক মরুপৰ্ব্বতের দৃশ্য দেখিতে লাগিল । —মিনির পিত। একখানি নোট লইয়া তাহাকে দিলেন, বলিলেন-- “রহমং, তুমি দেশে তোমার মেয়ের কাছে ফিরিয়া যাও । তোমাদের মিগনমুখে আমার মিনির কল্যাণ হউক —” এই টাকাটা দেওয়াতে মিনির পিতাকে উৎসব-সমারোহের দুই একটা অঙ্গ ছাটিয়া দিতে হইল ।