পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (অষ্টম ভাগ).pdf/২৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সম্পাদকীয় মন্তব্য। খাটি বাঙ্গলা শব্দের অর্থ বিচার ও বুৎপত্তি বিচার কোন একটা প্রদেশের উচ্চারণ ধরিয়া বিচার করিতে গেলে চলিবে না। { সম্ভবতঃ এরূপ শব্দের অধিকাংশই কোন মূল প্ৰাকৃত হইতে উৎপন্ন। সেই প্ৰাকৃত উচ্চারণ কি ছিল, তাহা এখন বলা কঠিন। হয়ত কোন স্থানে পুৰ্ব্ব বঙ্গের উচ্চারণ সেই মূল উচ্চারণেব নিকটবণী ; কোন স্থানে হয়ত পশ্চিম বঙ্গের উচ্চারণ অধিক নিকট। বিভিন্ন প্রদেশের উচ্চারণ একত্র মিলাইলে সেই মূল উচ্চারণ ধরা পড়িতে পারে। একটা উদাহরণ লওয়া যাক। মনে কর জালিয়া শব্দ। “জেলে’ লিখিলেও ইহার ঠিক চলিত উচ্চারণ প্ৰকাশ পায় না ; কেহ হয়ত ‘জো’লে।” এইরূপ লিখিয়া, অর্থাৎ মাঝে একটা ; চিহ্ন দিয়া উঠার উচ্চারণ প্ৰকাশ করিতে চাহিবেন । প্ৰদেশভেদে ইহার উচ্চারণ “জলো” “জোলো” বা ‘জো’লো” । সম্ভবতঃ মূল শব্দ ‘জালিক” । সংস্কৃত ‘ক’ প্ৰাকৃত ‘অ’ হইয়া যায় । বাঙ্গালায় আবার শব্দের শেষ স্বরটা দীর্ঘ হইয়া থাকে। তাহা হইলে প্রাচীন বাঙ্গলা ‘জালিআ’’ হওয়াই সম্ভব। প্রচীন পথির সাক্ষ্য এই অনুমানের পক্ষে। প্রাচীন ‘জালিআ’ আধুনিক কালে প্ৰদেশভেদে ‘জেলে’ ‘জোলো” প্রভৃতিতে পরিণত হইয়াছে । শেষের স্বরটা অর্থাৎ ‘আ’’ যে লোপ পাইয়াছে, তাহা আধুনিক উচ্চারণেও প্ৰকাশ পায় ; সেই লোপটা বুঝাইবার জন্য মাঝে একটা স্বরলোপের চিহ্ন ? দিতে হইতেছে। ফলে এই শ্রেণীর শব্দের চলিত উচ্চারণ প্ৰদেশভেদে ভিন্ন ; ও বানান করিয়া ঠিক প্ৰকাশও চলে না । এই গোলযোগ হইতে অব্যাহতির জন্যই বিদ্যাসাগর মহাশয় ‘ই অ’ প্ৰত্যয় দিয়া ‘জালি অ’ এইরূপ বানান করিয়াছেন । তাহার কারণ যে এইরূপ লিখিলে কোন প্রদেশবিশেষের প্রতি পক্ষপাত হইবে না, এবং অনেকটা মূল অর্থাৎ প্ৰাচীন উচ্চারণের আভাস পাওয়া যাইতে পারিবে । 罗 e বৰ্ত্তমান কালে যে সকল লেখক এই সকল শব্দ লইয়া আলোচনা করিবেন, তঁাহারা আপন আপন প্রদেশের চলিত উচ্চারণ ধরিয়াই আলোচনা করিলে ভাল হয়। তাহা হইলে ভ্ৰমের আশঙ্কা অধিক থাকিবে না ; ও বিভিন্ন প্রদেশের উচ্চারণ মিলাইয়া প্ৰাচীন মূল উচ্চারণটার নিকট পৌছিবার সুবিধা হইবে । মূল উচ্চারণটি যতক্ষণ না পাওয়া যাইবে, ততক্ষণ প্ৰত্যয়টি কি, ঠিক জানা যাইবে না ; প্ৰত্যেক শব্দের যত প্ৰাদেশিক উচ্চারণ, তত প্ৰত্যয় নিৰ্দ্ধারণ করিলে চলিবে না। মূল উচ্চারণ বাহির করিয়া মূল প্ৰত্যয়টি নিৰ্দ্ধারণ করিতে হইবে ; তার পর সেই মূল বাঙ্গলা প্ৰত্যয় কোন প্ৰাকৃত বা সংস্কৃত প্ৰত্যয় হইতে আসিয়াছে, তাহা স্থির হইবে । মিঠা, তিতা, উচা-এই মূল প্ৰত্যয় স্পষ্টতই অ’ । বাঙ্গল বিশেষণ শব্দের আকারান্ত