পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (তৃতীয় ভাগ).pdf/২৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা । { কাৰ্ত্তিক। سSSb পাঁচালী প্রবন্ধে করা মঙ্গল আমার। আঠারো ভাটীর মাঝে হইব প্রচার ॥” (২) “এতেক কহিয়া রায় গেল নিজ স্থল । কৃষ্ণরাম বিরচিল রায়ের মঙ্গল ৷” (৩) হইয়া যে একচিত রচিলা রায়ের গীত কৃষ্ণরাম তাহার সন্ততি ।” (৪) “এমনি প্রকারে কর আমার মঙ্গল। { এতেক বলিয়া রায় গেল নিজ স্থল ৷” অন্নদামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, গোবিন্দমঙ্গল, চৈতন্যমঙ্গল প্ৰভৃতি। “মঙ্গল” নামধেয় পাঁচালী গ্রন্থগুলি যেমন তন্নামাত্মক দেবতার লীলা প্ৰকাশক কাব্য, আমাদের আলোচ্য এই গ্ৰন্থখানিও তদ্রুপ “দক্ষিণরায়” নামক গ্ৰাম্যদেবতার মহিমা প্ৰকাশক কাব্য। দক্ষিণরায় দেবতা সম্বন্ধে দু'এক কথা বলা এখানে অপ্রাসঙ্গিক হইবে না ; কারণ বাঙ্গালার অন্তর্গত ২৪ পরগণার দক্ষিণাংশে, হুগলীর দক্ষিণাংশে, খুলনায়, যশোহরে, নওয়াখালীতে এবং সুন্দরবনে এই দেবতার পুজা বিশেষরূপে প্রচলিত। ইনি গ্রামবাসীদিগের মতে ব্যাস্ত্ৰভীতিনিবারক দেবতা, সুতরাং সুন্দয়াবনের পার্শ্ববৰ্ত্তী জেলাসমূহে ও সুন্দরবনের আবাদী মহলে এই দেবতার বিশেষরূপে পূজা হয়। এ অঞ্চলে যেমন কালী, শিব, রাধাকৃষ্ণ প্ৰভৃতি দেবতার মন্দিরাদির বাহুল্য দেখা যায়, ঐ সকল অঞ্চলে সেইরূপ প্ৰতি গ্রামের প্রতি পল্লীতে দক্ষিণরায় দেবতার স্থান আছে। বারুইপুর, কেদালিয়া, ধৰ্ব্বধবে প্রভৃতি স্থানে ভদ্র গৃহস্থেরা ইহার পূজা করেন। সাধারণতঃ বনাঞ্চলের মউল্যা, মলঙ্গী, পোদ, বাগদী, কাঠুরিয়া, শীকারী, বুনো, নৌজীবী প্রভৃতি লোকেই ইহার পূজা করে। ইহার পুজাবিধিও বহুকাল হইতেই চলিয়া আসিতেছে। ঐ অঞ্চলের মুসলমানেরাও ইহাকে পীর গাজীর ন্যায় ভক্তি করে, পুজা দেয়। বুনো ও কাঠুরিয়ারা যখন সুন্দরবনে যায়, তখন নৌকা হইতে নামিয়াই প্ৰথমে সকলে বন্যপ্ৰান্তে এই দেবতার পুজা করে, পরে প্রসাদী পুষ্পাদি মাথায় বাধিয়া বনে প্ৰবেশ করে। তাহদের বিশ্বাস দক্ষিণরায়ের গুজা না দিয়া বনে প্রবেশ কৱলে নিশ্চয়ই বাঘের কবলে প্রাণ হারাইতে হইবে। সভ্য গ্রামের মধ্যেও দক্ষিণরায় দেবতার কোথাও কোথাও মন্দির আছে, কিন্তু সাধারণতঃ বৃহৎ প্রাচীন বট, অশ্বখ্য, বিন্ধ, নিম্বাদি বৃক্ষতলই তাহার མགཙཝ་ས་ —কোথাও মাটীর চিবি, কোথাও সিন্দুর-মণ্ডিত প্রস্তরখণ্ড, কোথাও বা দেবতার কল্পিত মুণ্ড মাত্র প্রতিমারূপে স্থাপিত। সুন্দরবনের প্রত্যেক নদী ও খালের তীরবর্তী প্ৰায় १डाक প্ৰাচীন বৃক্ষতলেই এই দেবতার পুজা হয়। অনেক স্থলে বৃক্ষের শাখ্যার উপরও দেবতার মুণ্ড মাত্র প্রতিষ্ঠিত আছে। রাত্ৰিতে বা দ্বিপ্রহরে এই সকল বৃক্ষের নিকট দিয়া লোক চলিতে চাহে না, অজানিত পথিকেরা গাছের উপয়ু মনুষ্যকৃত্তি। মুণ্ড দেখিয়া ভয় পায় । ,