পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (দ্বিতীয় ভাগ).pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬০ সাহিত্য-পরিষদ-পত্রিকা। বৈশাখ। ] স্বরের মন্দিরে গমন করিয়াছিলেন, সেই রজনীতে বিমলাকর্তৃক মুক্ত বাতায়নপথে , কতলু খার সেনানী ওসমান খাঁ ৰীরেজ সিংহের দুর্গে প্ৰবেশ করেন এবং বলপ্রদর্শনে বিমলার নিকট হইতে দুর্গের সমস্ত চাবি লইয়া দুর্গ অধিকার করেন। বঙ্কিম বাবুর কোন নায়ক নায়িকারই অসবৰ্ণ বিবাহ হয় নাই, কোন বিবাহই আহিন্দু মতে সম্পন্ন হয় নাই। তিনি যে, কেবল শাস্ত্রসন্মত ব্যবহারের প্রতি লক্ষ্য রাখিয়াছেন, তাহা নহে, সামাজিক নিয়মেরও কোন খানে ব্যভিচার হইতে দেন নাই। বীরেন্দ্ৰ সিংহ বিমলার প্ৰেমে মুগ্ধ হইয়া, সেই প্রণয়াকাঙ্ক্ষা পরিতৃপ্তির আশায় চোরের ন্যায় অন্যের গৃহে প্ৰবেশ করিয়াছিলেন, তথাপি শূদ্রাগর্ভজাত বলিয়া বিমলাকে বিবাহ করিতে সম্মত হন নাই । দাসীভাবে বিমলা চিরকাল বীরেজের গৃহে অবস্থিতি করিয়াছিলেন। বিমলার গর্ভে কোন সন্তানও জন্মগ্রহণ করে নাই। কপালকুণ্ডলা কাপালিকের হস্ত হইতে নবকুমারের প্রাণরক্ষণ করিয়াছিলেন। এজন্য কাপালিকের আবাসে কপালকুণ্ডলার। আর স্থান হইবে না, প্ৰত্যুত দর্শন পাইলে কাপালিক নিশ্চয়ই র্তাহার প্রাণসংহার করিবেন। নবকুমারের সঙ্গে যাওয়া ভিন্ন তাহার প্রাণ রক্ষার আর কোন উপায়ই নাই। কিন্তু অপরিচিত যুবকের সহিত যুবতী কপালকুণ্ডলার যাওয়াও ত উচিত নয়। সুতরাং সে সময়ে উহাদের পরস্পরের বিবাহ ভিন্ন কপালকুণ্ডলার ধৰ্ম্ম ও প্রাণ রক্ষার আর কোন উপায়ই ছিল না। এ অবস্থায় আধুনিক অনেক গ্ৰন্থকার তীহাদের জাতির কথা যে, তুলিতেন। না এবং বিবাহ যে, গান্ধৰ্ব্ব বিধানেই সম্পন্ন করিতেন, তাহাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু বঙ্কিম বাবু এরূপ প্ৰয়োজনীয় স্থলেও তাহা করেন নাই । তিনি অধিকারীকে কন্যাকর্তা করিয়া তাহার দ্বারা যথানিয়মে বিবাহক্রিয়া সম্পন্ন করিলেন। অধিকারী অগ্ৰে নবকুমারের পরিচয় লইলেন ; তাহার গাই, গোত্র প্রভৃতির পরিচয় পাইয়া, যখন জানিলেন, বিবাহ শাস্ত্ৰসম্মত হইতে পারে, তখন নবকুমারের নিকট বিবাহের প্রসঙ্গ উত্থাপন করিলেন, পরে অধিকারী পুপি দেখিয়া লগ্ন স্থির করিলেন এবং তঁাহাদের উভয়কেই যথাবিধানে উপবাসাদি করাইয়া তাহদের পরিণয় কাৰ্য্য সম্পাদন করিলেন। “এ অবস্থায় যতদূর সম্ভব ততদূর যথাশাস্ত্ৰ কাৰ্য্য হইল।” মাধ্যাকর্ষণ যেমন বিশ্ব ব্ৰহ্মাণ্ডকে বাধিয়া রাখিয়াছে, ভালবাসা সেইরূপ আমাদের সমাজকে বাধিয়া রাখিয়াছে। ভালবাসা বা প্ৰণয় না থাকিলে সমাজের স্থিতি হয় না । এই প্ৰণয় পাত্ৰভেদে ভক্তি, শ্রদ্ধা, স্নেহ, প্ৰেম প্রভৃতি নানা নামে অভিহিত হয়। কিন্তু প্ৰণয় এক পক্ষের মধ্যে জন্মিলে সে প্ৰণয় দ্বারা কোন কাৰ্য্য হয় না, উভয় পক্ষে প্ৰণয় জন্মিলে তবে সে প্ৰণয়ে মানুষ্যের সুখ ও কাৰ্য্য হয়। কিন্তু প্ৰণয় সকল অবস্থায় স্থায়ী হয়। না, অনেক সময়েই কোন কারণ ঘটিলে প্ৰণয়ভঙ্গ হইয়া যায়। অতি গভীর প্রণয়ও সামান্য কারণে ভাঙ্গিয়া যায়। যেখানে প্রণয়ীদিগের উভয় পক্ষে সাম্য ভাব, সেই খানেই ঐ রূপ প্রায়ই ঘটে। যেখানে এক পক্ষের প্রণয় অন্য অপেক্ষা গভীর, সেখানে সহজে প্রণয়