পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (পঞ্চম ভাগ).pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ । সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা । | ১ম সংখ্যা। দ্বিজ রামচন্দ্ৰ কয়, গৌরী গুণ সুধাময়, রই মন চরণ-কমলে ৷ উদ্ধত কবিতায় যে মস্তক-মুণ্ডন, দেবকৰ্ম্মে দ্বেষ, পিতৃশ্ৰাদ্ধাদিতে অবিশ্বাস প্রভৃতি যাহা বৰ্ণিত হইয়াছে, উহা কাের্ক্স কোন সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করিয়া ঠিক বুঝিতে পারা যায় না। পূৰ্বোক্ত ধৰ্ম্মাবলম্বীগণের মধ্যে এক মুসলমান ধৰ্ম্মাবলম্বী ব্যতীত বৌদ্ধভিক্ষু ও ভেকধারী বৈরাগীগণ মস্তক মুণ্ডন করেন, পিতৃশ্ৰাদ্ধাদি করেন না। কিন্তু এক বৌদ্ধ ভিন্ন বৈষ্ণব সম্প্রদায়কে দেবকৰ্ম্মে দ্বেষ করিতে দেখা যায় না। আবার ২০০ বৎসর পুর্বে যে বঙ্গদেশে বৌদ্ধধৰ্ম্মাবলম্বী ছিল, এমতও অনেকে বিশ্বাস করেন না। কবি বৈষ্ণবসম্প্রদায় সম্বন্ধে কি মত পোষণ করিতেন, তাহাও অনুমান করা দুরূহ। তিনি এক স্থানে লিখিয়াছেন ;- ‘সত্যবাদী জিতেন্দ্ৰিয়, ব্ৰাহ্মণ বৈষ্ণবপ্ৰিয়, মহেন্দ্ৰ সমান ক্ষিতিপতি ।” এখানে বৈষ্ণব অর্থে যদি বিষ্ণুর উপাসক বা বিষ্ণুভক্ত এই সাধারণ অর্থ গ্ৰহণ করা যায়, তাহা হইলে বোধ হয়। শাক্ত কবি মহাত্মা চৈতন্যের প্রবর্তিত বৈষ্ণবধৰ্ম্মাবলম্বী ভেকধারী বৈরাপীদিগকে লক্ষ্য করিয়া কটাক্ষ করিয়াছেন। শুনিতে পাওয়া যায়, বর্তমান সময়ে বৈষ্ণবধৰ্ম্মের প্রতি লোকের যেরূপ শ্ৰদ্ধা, যখন এই ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের প্রথম আভু্যদয় হয়, তখন সাধারণের এতদূর শ্রদ্ধা ছিল না। কাব্যের সাধারণ জ্ঞাতব্য বিষয় একরূপ বৰ্ণিত হইল, এখন এই কাব্যের উপাখ্যান্যাতিরিক্ত ঘটনা, নায়ক, নায়িকা, রস, গুণ, দোষ, রীতি ও অলঙ্কার প্রভৃতি সংক্ষেপে বিবৃত হইতেছে। নিষধানগরের অধিপতি রাজা বীরসেন সন্তান না হওয়ায় দুঃখিত। প্ৰতিদিন মহাদেবের আরাধনা করেন। শিব তঁহার প্রতি সন্তুষ্ট হইয়া পুত্র বর প্রদান করিলেন, কিন্তু বর দিয়াই তঁহার মনে- চিন্ত হইল, সৰ্ব্বগুণান্বিত কোন ব্যক্তি ভূতলে জন্মগ্রহণ করিবে। একদা কুবেরপুত্ৰ জয়ৎসেন স্বীয় প্ৰিয়তমা চন্দ্ৰমালার সহিত কৈলাসশিখরে মহাদেবের কাননে বিহার করিতেছিলেন, সেই সময় মহাদেব পাৰ্ব্বতী সহিত সেখানে উপস্থিত, তিনি কুবেরপুত্রের চপলতা দেখিয়া ক্রুদ্ধ হইলেন এবং ডাকিয়া বলিলেন, “তুমি কৈলাসে অবস্থানের যোগ্য নহ, যেহেতু তুমি পাপে আসক্ত, অতএব ভুতলে গিয়া জন্ম পরিগ্ৰহ কর ।” অভিশাপ শ্ৰবণে কুবেরপুত্ৰ কঁাদিয়া মিনতি করিতে লাগিলেন, তাহাতে পার্বতীর দেয়া হইল, তিনি জয়ৎসেনকে বলিলেন, “বাছা ভয় নাই, তুমি ভূমণ্ডলে গিয়া জন্মগ্রহণ কর, তোমার কীৰ্ত্তি— ভুবন-বিখ্যাত হইবে।” চন্দ্ৰমালাকেও বললেন, ‘সতি ? তুমি পৃথিবীতে জন্মিয়াও নিজ পতি প্রাপ্ত হইবে, তোমাকে অনুমতি করিতেছি, তুমি আমার ব্ৰত প্ৰকাশ করিও।” তাহার পর জয়ৎসেন ও চন্দ্ৰমালা যথাক্রমে নিষধদেশে ও বিন্দর্ভে জন্মগ্ৰহণ করিলেন। নলোপাখ্যান সকলেই অবগত আছেন, সুতরাং বাহুল্যভয়ে এখানে উহার সুমুদয় অংশ উদ্ধত করিলাম না। মহাভারতে আছে, দময়ন্তীর গর্ভে নলের ইন্দ্ৰসেন নামক