পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (পঞ্চম ভাগ).pdf/২৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२8० | সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা। -- f ৪ৰ্থ সংখ্যা । প্ৰবন্ধকারের উদাহৃত আর দুই একটী স্থল পরীক্ষা করিলেই তাঁহার মতের অযুক্তিস্হত। আরও বিশদ হইবে। দ্বিতীয় উদাহরণটী গ্ৰহণ করা যাউক, ‘প্রবৃত্তি’ ‘নিবৃত্তি’। প্ৰৰন্ধকারের মতে “প্রবৃত্তি’ শব্দের অর্থ ‘সম্মুখের দিকে ঝোঁক” অৰ্থাৎ সম্মুখ-প্রবণতা, কারণ ফ্রাহার মতে “প্ৰ’র ঐ রূপ। অর্থ। তঁহর নিজের কথায় বলিতে হইলে ‘ঘোড়ার গাড়ির’ অর্থ ‘ঘোড়া’ বলা যাইতে পারে’। কারণ দেখা যাইতেছে যে, তঁহার মত অনুসরণ করিলে “প্ৰবৃত্তি’ শব্দের অন্তর্গত বৃত্তি’ শব্দটী নিরর্থক হইয়া উঠে। নিবৃত্তি’ শব্দের অর্থ তাহার মতে ‘তিতরের দিকে বৃত্তি টানিয়া লওয়া”। কিন্তু তিনি ‘নি'র যে অর্থ করিয়াছেন, তাহাতে অন্তৰ্নিষ্ঠ বৃত্তি অর্থাৎ যে বৃত্তি ভিতরে আছে এইরূপ হওয়া উচিত। যে বৃত্তি ভিতরে আছে ও বৃত্তিকে তিতরে লইয়া যাওয়া এই দুইটী কথার অর্থগত ভেদ স্পষ্ট। মনে করুন। আমি বলিলাম ‘আমি মাংসভোজনে নিবৃত্ত হইয়াছি।’ তাহার অর্থ প্ৰথম কল্পে আমি মাংসভোজন-বিষয়িনী বৃত্তি বা চেষ্টা। ভিতরে লইয়া গিয়াছি ও দ্বিতীয় কল্পে ঐ বৃত্তি আমার ভিতরে আছে। প্রথম কল্পে এককালে ঐ বৃত্তি বাহিরে ছিল অর্থাৎ পরিস্ফাট ছিল, কিন্তু আমি এক্ষণে উহা ভিতরে লইয়া গিয়াছি অর্থাৎ দমন করিয়াছি এইরূপ বুঝায়। কিন্তু দ্বিতীয় করে উহা সৰ্ব্বদাই আমার ভিতরে আছে, তবে কোন বিশেষ কারণবশতঃ বাহিরে পরিস্ফুট হয় না। এইরূপ বুঝায়। অর্থাৎ দারিদ্র্য, রোগ বা অন্য কারণবশতঃ আমার মাংসভোজনের বৃত্তি প্ৰকাশ হইতে পারে না । এক্ষণে এই দুই কল্পের কোন কল্প আমাদের গ্রাহ ? সম্ভবতঃ শেষ কল্প, কারণ উহা প্ৰবন্ধকারের অনুগমের (Generalisation ) ফল। এক্ষণে প্ৰবন্ধকার যদি প্রথম কল্প আশ্রয় করেন, তাহা হইলে ‘নি’র অর্থ ‘অন্তনিষ্ঠত” এই মত তঁহাকে পরিত্যাগ করিতে হয়, আর যদি দ্বিতীয় কল্প গ্ৰহণ করেন, তাহা হইলে সৰ্ব্বজনস্বীকৃত অর্থ জলাঞ্জলি দিতে হয় । এই উভয়তঃ পাশারজু (Dilemma) হইতে উদ্ধারের উপায় দেখিতেছি না। “প্ৰবৃত্তি’ শব্দের প্রধান অর্থ ‘চেষ্টা, কাৰ্যারম্ভ, কাৰ্য্যে উন্মািখত’ ইত্যাদি। ইহাদের কোন একটী অর্থ গ্ৰহণ করিলে প্ৰবন্ধকার একরূপে “প্ৰ’র অর্থসঙ্গতি করিতে পারিতেন ; কারণ ঐ স্থলে যদি “প্র’র অর্থ ‘সম্মুখপ্রবণতা” গ্রহণ করা যায়, ও বৃত্তি’ শব্দে চেষ্টা অৰ্থ করা যায়, তাহা হইলে “প্রবৃত্তি’ শব্দে ‘সম্মুখপ্ৰবণ চেষ্টা।” এইরূপ বলা যাইতে পারে। অর্থাৎ যে চেষ্টা বা ক্লায়িক ব্যাপার বাহিরে পরিস্ফুট হইবার নিমিত্ত উন্মুখ, অর্থাৎ কাৰ্য্যে উন্মুখতারূপ অর্থলাভ করা যায়। প্ৰবন্ধকার কিন্তু এ অর্থে গ্ৰহণ করেন নাই, তাহার সিদ্ধান্ত ‘প্র’র অর্থ ‘সম্মুখ প্রবণতা”। সুতরাং যখন দেখিলেন, প্রবৃত্তি শব্দের ঝোঁকরূপ একটা অর্থ আছে, তখন বিবেচনা কয়িলেন ঐ অর্থই তাহার মতের অনুকুল ও ঐ অর্থই লইয়াছেন। কিন্তু উহাতে যে ধাত্বর্থের একেবারেই পরিত্যাগ ঘটিয়া উঠে, তাহা অনুধাবন করেন নাই। আর এক কথা, তিনি যেরূপে অর্থ দেখাইয়াছেন, তাহাতে ‘প্র’ ও ‘নি'র সহিত ‘বৃত’ ধাতুর যোগ নাই, বৃত্তি’ শব্দের সহিত যোগ, সুতরাং উহারা উপসৰ্গপদ বাচাই হইতে পারে না। যদি বলেন, 'প্ৰশ্বাস’ শব্দের আমরা যে অর্থ দেখাইয়াছি, তাহাতেও ঐ আপত্তি। তাঁহাতে বক্তব্য এই