পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (পঞ্চম ভাগ).pdf/২৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S88 সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা : [ ৪র্থ সংখ্যা । সন্দেহ নাই। 'এক্ষণে দুই একটা ক্ষিপ ধাতুর প্রয়োগ গ্ৰহণ করা যাউক “চোর রাজপুরুষদিগের •চক্ষে ধূলি নিক্ষেপ করিয়া পলায়ন করিল”। এস্থলে নিক্ষেপ হইল, কারণ লোকের চক্ষুতে নিক্ষিপ্ত হইবার জন্যই ধূলির জন্ম ও ধূলির সহিত চক্ষুর আন্তরিক সম্বন্ধ আছে। “রাত্রিতে শর্করা প্ৰক্ষেপ করিয়া দধি ভোজন করা উচিত এস্থলে প্ৰক্ষেপ হইল, কারণ শর্করা ত দধিতে প্ৰক্ষিপ্ত হইবার হয় জন্য উৎপন্ন হয় নাই ও শর্করার সহিত দধির ত কোন আন্তরিক সম্বন্ধ নাই । “তিনি মৃত্যুকালে তাহার অনাথ পুত্রকে দুরন্থ আত্মীয়ের হন্তে নিক্ষেপ করিলেন” এ স্থলে নিক্ষেপ হইল, কারণ দূরস্থ আত্নীয়ের হন্তে সমৰ্পিত হইবার জন্যই তাহার পুত্রের জন্ম ও সেই আত্মীয়ের হস্তেয় সািহত র্তাহার পুত্রের আন্তরিক সম্বন্ধ আছে। “দুগ্ধে দধি প্ৰক্ষেপ করিয়া ছানা প্ৰস্তুত করে, এস্থলে প্ৰক্ষেপ হইল কারণ দধি র্ড আর দুগ্ধে প্রক্ষিপ্ত হইবার জন্য উৎপন্ন হয় নাই এবং দুগ্ধের সহিত দাধর ত কোন আন্তরিক সম্বন্ধ নাই! এক্ষণে শ্রোতৃমহােদয়গণ দেখিলেন, প্রবন্ধকারের অর্থগত ভেদ অনুসরণ করিলে কিরূপ ব্যাসনপরম্পরায় পতিত হইতে হয়। তঁহার নিজের উদাহরণ লইয়াই দেখুন!; গোলা নিক্ষেপ হইল, কারণ দুর্গে নিক্ষিপ্ত হইবার জন্যই গোলার জন্ম, বেশ কথা, কিন্তু তাহা হইলে শ্লোক নিক্ষিপ্ত কেননা হইবে ? কারণ প্ৰক্ষিপ্ত শ্লোকগুলি কেবল পরের পুস্তকে প্রক্ষিপ্ত হইবার জন্যই রচিত হয় নাই কি ? কে বলিল প্ৰক্ষিপ্ত শ্লোকের সহিত পুথির কোন প্রকার আন্তরিক সম্বন্ধ নাই-আমরা ত দেখিতে পাই ঐ সম্বন্ধ স্থল বিশেষে এতদূর ‘আন্তরিক” যে কোনটী প্রক্ষিপ্ত কোনটী মৌলিক তাহা অনেক সময় নির্ণয় করাই দুরূহ হইয়া উঠে। আর প্রবন্ধকার দার্শনিক হইয়া কি করিয়া ঐ রূপ স্থলে “আন্তরিক সম্বন্ধা’ শব্দ প্ৰয়োগ করিলেন ? আন্তরিক সম্বন্ধের অর্থ কি ? অর্থবিশ্লেষণের চেষ্টা করিলেই বুঝিতে পারিতেন যে ঐরূপ সম্বন্ধ বিশেষের নির্বাচন অসম্ভব । এই ত গেল ভেদের বিচার। এক্ষণে হয়ত প্ৰবন্ধকার বলিবেন “নিক্ষেপ”, এইস্থলে “নি'র অর্থ যে in তাহাতে ত আর সন্দেহ নাই। তাহাতে বক্তব্য এই যে ঐ অর্থ ক্ষিপ্ৰ ধাতু হইতে আসিতেছে ও আসিতে পারে। উহার জন্য “নি'র অর্থ স্বীকারের কিছুমাত্র প্রয়োজন হয় না। দুর্গে গোলা নিক্ষিপ্ত হইল বলিলেও যাহা বুঝায়, ক্ষিপ্ত বলিলেও তাহাই বুঝায়, আত্মার প্রক্ষিপ্ত শ্লোক এই স্থলে কেন নিক্ষিপ্ত হইল না, তাহার কারণ আর কিছুই নহে, কেবল তাদৃশ ব্যবহারের অভাব, অৰ্থাৎ শ্লোকের সম্বন্ধে ‘নিক্ষিপ্ত’ শব্দ প্রয়োগের কোনরূপ বাধা বা অসামঞ্জস্য আছে বলিয়াই যে ঐ রূপ প্রয়োগ হয় না, তাহা নহে, কেবল অনেকে ঐ রূপ স্থলে “প্ৰক্ষেপ” শব্দ প্রয়োগ করিয়াছেন বলিয়া প্ৰামাণিক গ্ৰন্থকারদিগের মধ্যে ঐরূপ স্থলে প্ৰক্ষেপ শব্দ ব্যবহারের একটী রীতি হইয়া উঠিয়াছে। এক্ষণে যদি কেহ ঐরূপ স্থলে ‘নিক্ষেপ” শব্দের ব্যবহার করেন, তাহা হইলে তঁহাকে চিন্নাগত রীতি ভঙ্গের দোষে দুষ্ট হইতে হইবে। এই নিমিত্তই শ্লোকের সম্বন্ধে ‘প্ৰক্ষেপ” শব্দই প্রয়োগ হয়। সংক্ষেপতঃ বলিতে হইলে ঐ রূপ শব্দ ব্যবহার idiom হইয়া গিয়াছে। প্ৰবন্ধকার যে এক যাত্রায় পৃথক ফলের কুখ বলিয়াছেন, অর্থাৎ এককাৰ্য্য করিয়াও সময়ে সময়ে ব্যক্তি বিশেষ বা পদার্থ বিশেষের ভিন্ন ভিন্ন নাম বা আখ্যা হয়, তাহান্ন উপপত্তি অন্তরূপ। ঐ উপপত্তি প্ৰদৰ্শন করিতে হইলেক্ট্র