পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (পঞ্চম ভাগ).pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२७, ' ' সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা । [ ১ম সংখ্যা । . . . উহার তালিকা ‘প্ৰস্তুত করেন, তাহা হইলে পাঠকুকে যেরূপ ক্লান্ত, সেইরূপ বিরক্ত হইতে হয়। ফলতঃ ইতিহাসলেখক ঘটনামালা পরস্পর সুসম্বন্ধ করিয়া সময়নিৰ্দেশপূর্বক উহা পাঠকের সম্মুখে প্ৰকাশ করিবেন। প্ৰাচীন ঐতিহাসিকগণ ইতিহাসকে যে সকল অলঙ্কারে সজ্জিত করিতে যত্নশীল হইতেন, তৎসমুদয়ের মধ্যে একটী বিষয় আধুনিক ঐতিহাসিকদিগের নিকট উপেক্ষিত হইয়াছে। প্রাচীন ইতিহাসে দেখা যায়, ইতিহাস-বর্ণিত কোন প্রধান ব্যক্তি প্রকাশ্য স্থলে দণ্ডায়মান হইয়া বক্ততা করিতেছেন। এইরূপ বক্ততায় ঐতিহাসিক ইতিহাসের বিভিন্ন স্তরের উদঘাটন করেন । সাধারণকে ধৰ্ম্মনীতি ও রাজনীতি সম্বন্ধে উপদেশ দেন এবং বিভিন্ন দলের মতামত নির্দেশ করিয়া থাকেন। থুসিদাইদিস এইরূপ বক্তৃতা প্ৰণালীর সমর্থক। তিনি স্বকীয় ইতিহাসে এইরূপ বক্ততায় যথোচিত উদ্দীপনার পরিচয় দিয়াছেন। অন্যান্য গ্ৰীক ও রোমক ঐতিহাসিকও আপনাদের ইতিহাসে এইরূপ বক্ততার সন্নিবেশ করিয়া গিয়াছেন। এই সকল বক্তত, প্রাচীন ঐতিহাসিকদিগের বাক্যবিন্যাসকৌশল এবং ওজস্বিতা ও ল্যালিত্যের প্রকৃষ্ট পরিচয় স্থল। কিন্তু বাক্বিভূতিতে হৃদয়গ্ৰাহী হইলেও, উহা ইতিহাসে সন্নিবেশিত করা তাদৃশ সঙ্গত বোধ হয় না। লেখক এইরূপ স্থলে সত্য হইতে ধিচুত হইয়া পড়েন। তিনি ঐ সকল বক্ততা পল্লবিত ও অলঙ্কার-ছটায় সুশোভিত করিবার জন্য কল্পনার আশ্রয় গ্ৰহণ করিতে সঙ্কুচিত হয়েন না । ঈদৃশ বিষয় কল্পনার লীলাক্ষেত্ৰ কাব্য প্রভৃতিতে স্থান পাইতে পারে। ইতিহাসের ন্যায় প্রকৃত ঘটনামূলক বিষয়ে ইহা সন্নিবেশিত না করাই ভাল। ইতিহাস লিখিতে হইলে কি কি বিষয় দৃষ্টি রাখা উচিত, তাহা সংক্ষেপে উল্লিখিত হইল। আমাদের দেশে এখন ইতিহাস লেখা আরম্ভ হইয়াছে। কাব্য-নাটক-প্লাবিত সাহিত্যক্ষেত্রে কেহ কেহ ইতিহাসের সন্মান-রক্ষায় উদ্যত হইয়াছেন, কিন্তু ইহারা যেরূপ গবেষণাকৌশলের পরিচয় দিতেছেন, ইতিহাসের প্রকৃতির দিকে সেরূপ দৃষ্টি রাখিতেছেন না। সৰ্ব্বপ্রথম কোন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করিলে যে ক্ৰটী ঘটয়া থাকে, আমাদের সাহিত্য-সমাজে ঐতিহাসিকদিগেরও তাহাঁই ঘটয়াছে। ভাষা, শৃঙ্খলা এবং বর্ণনা প্রভৃতিতে ইহাদের তাদৃশ নৈপুণ্য পরিদৃষ্ট হইতেছে না। ইহাদের গ্রন্থে অতিরিক্ত স্বদেশপ্ৰেম এবং অত্যধিক অহাজ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যাইতেছে। ইহার ঘটনাগুলি স্তরে স্তরে সজ্জিত করিতেছেন, কিন্তু বৰ্ণনাবৈচিত্ৰ্য বা শৃঙ্খলার অভাবে ঐ সকল ঘটনার বিবরণ নিরতিশয় নীরস হইয়া পড়িতেছে। ইহারা বৈদেশিক ইতিহাস লেখকদিগের মতামত এত উদ্ধত করিতেছেন যে, তৎসমুদয় দ্বারা কেবল গ্রন্থগুলি ভারাক্রান্ত হইয়া পড়িতেছে মাত্র। ইহাতে এই ফল হইতেছে যে, পাঠক এক স্থানে পরস্পর বিরোধী মতসমূহ স্তপোকারে সজ্জিত দেখিতেছেন। " উহ্য তঁহাদের মানসপটে সুচিত্ৰিত আলেখ্যের ন্যায় অঙ্কিত হইতেছে না। বস্তুতঃ ঐতিহাসিক ক্ষেত্রে তাঁহাদের ন্যায় পাঠকও উল্কান্ত হইয়া পড়িতেছেন। এই সকল ক্ৰটী দূরীভূত * হইলে, আমাদের মধ্যে ইতিহাসের গৌরব রক্ষিত হইতে পারে। আমরা পাশ্চাত্য পণ্ডিত