পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (ষষ্ঠ ভাগ).pdf/২০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্ৰন্থরচনা সম্বন্ধে প্ৰস্তাব । Yb-2 পণ্ডিতমণ্ডলীর পরামর্শে উহার সৌন্দৰ্য্য বৃদ্ধি করিতে যত্নশীল হইবেন । এইরূপে ক্রমে সাহিত্যের নিৰ্ম্মলতা ও প্ৰভা বৃদ্ধি হইবে। ২৬ বৎসর পূর্বে দূরদর্শী বীমস সাহেব এইরূপে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ প্ৰতিষ্ঠার প্রস্তাব করিয়াছিলেন। ছাব্বিশ বৎসরের মধ্যে বঙ্গীয় সাহিত্যের অনেক পরিবর্তন হইয়াছে । একদিকে বঙ্গদর্শনদ্বারা বাঙ্গালা সাহিত্যের যেরূপ যুগান্তর ঘটিয়াছে, অপর দিকে বান্ধব, ভারতী, আৰ্য্যদর্শন প্ৰভৃতিদ্বারাও উহার পরিপুষ্টি হইয়াছে। যাহা হউক, র্যাহারা সর্বপ্রথম এই বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সংগঠনে উদ্যত হয়েন, তাহারা বোধহয়, বীমস সাহেবের প্ৰস্তাব অনুসারে একটি সঙ্কলিত আদর্শ আপনাদের সম্মুখে ধরিয়া ছিলেন। অভিধান ও ব্যাকরণ প্ৰণয়ন করা তাহদেরও প্ৰধান ও প্ৰথম উদ্দেশ্য ছিল। যখন পরিষদ পুনর্গঠিত হয়, এবং ইংরেজীর পরিবর্তে বাঙ্গালা ভাষায় যখন উহার প্রস্তাবাদি আলোচিত ও প্ৰবন্ধাদি লিখিত হইতে থাকে, তখন পরিষদ বাঙ্গালা ভাষা ও বাঙ্গালা সাহিত্য ঘটিত বিষয়ের আলোচনাতেই ব্যাপৃত ছিলেন। সাহিত্য সংসারে যে যে বিষয়ের একান্ত অভাব আছে, সেই সকল বিষয় সুনির্দিষ্ট করিতেই পরিষদের যত্ন ও আগ্ৰহ পরিলক্ষিত হইয়াছিল। এখনও পরিষদের এরূপ যত্ন ও আগ্ৰহ বিলুপ্ত হয় নাই। অসামান্য প্ৰতিভাশালী ব্যক্তি ভাষা ও সাহিত্যকে আপনার পথে লইয়া গিয়া থাকেন । অপর লেখকগণ বাঙানিস্পত্তি না করিয়া, তাহদের পদাঙ্কের অনুসরণ করেন। তঁহাদের প্ৰবৰ্ত্তিত নিয়ম পরবর্তী সময়ে কোন কোন অংশে অপ্রয়োজিত হইলেও কেহই তদ্বিরুদ্ধে কোন কথা বলিতে সাহসী হয়েন না। সেকন্সপীয়র বা মিণ্টন, বেকন বা জন্সনের ন্যায় অলোক-সাধারণ প্ৰতিভাশালী মহাপুরুষ ইংরেজী সাহিত্য ও ভাষাকে এইরূপে সুনির্দিষ্ট করিয়াগিয়াছেন। আমরা, জাতীয় সাহিত্যক্ষেত্রে এইরূপ প্রভাবশালিনী প্ৰতিভার ফলভোগ করি নাই। ঈদৃশী প্ৰতিভায় যে আমাদের কৰ্ম্মক্ষেত্র আলোকিত হইবে, আমরা সে আশাও করি না । যে অমানুষী শক্তিতে সঞ্জীবিত হইয়া, ইংরাজি সাহিত্য অবারিত-বিক্রমে ও প্ৰবলবেগে উন্নতি-পথে প্ৰধাবিত হইয়াছে, নিয়তির অপরিবর্তনীয় বিধানে বোধহয়, আমাদের সাহিত্যে সেইকাপ শক্তির সঞ্চার হইবে না ; কিন্তু ইহাতে আমাদের হতাশ্বাস হইবার কারণ নাই। দীর্ঘকালের পরাধীনতায় আবদ্ধ, পারদলিত ও পরনিগৃহীত জাতির সাহিত্যক্ষেত্রে প্ৰতিভার বিকাশ যে, একবারে হয় নাই, এমন নহে। পদ্যাংশে আমাদের সাহিত্য চিরগৌরবান্বিত । গদ্যাংশে প্ৰতিভাশালী লেখকদিগের যত্ন ও পরিশ্রম বিফল হয় নাই। রামবসুর রচনা, রাজীব লোচনের চেষ্টায় প্ৰাঞ্জল হয়। মৃত্যুঞ্জয়ের রচনা রামমোহনের প্রতিভায় অভিনব পথে প্ৰবৰ্ত্তিত হইতে থাকে। বিদ্যাসাগর ও অক্ষয়কুমারের প্রতিভায় উহা সৌন্দৰ্য্যশালিনী এবং ওজস্বিনী হইয়া, সাহিত্যে আপনার অপূর্ব প্রভাব বিস্তার করে। পরবর্তীকালে বঙ্কিমবাবু প্ৰভৃতির প্রতিভায় উহা ভিন্নমুখী হইয়া আত্মপ্রাধান্য অপ্রতিহত ভাবে রাখিয়ছে। ব্যক্তিগত প্ৰতিভার যতটুকু ফল আমাদের অদৃষ্ট ছিল, তাহা আমরা ভোগ করিয়াছি।