পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৪
সিরাজদ্দৌলা।

রক্ষার উপায়ান্তর নাই। কিন্তু বাহুবল শুধু শারীরিক বল নহে;—তাহার জন্য বিশ্বস্ত রণকুশল সেনানায়ক চাই, কলহ বিবাদে জয়লাভ করিতে পারে, এরূপ সাহসী সৈন্যদল চাই, এবং এই সকল সৈন্যদলকে অন্নবস্ত্র ও বেতন দিয়া প্রতিপালন করিতে পারেন, এরূপ অর্থবল চাই। সিরাজদ্দৌলার ইহার কোন সম্বলই নাই।

 সেকালে রাজধানীতে যে সকল ধনশালী বণিক ও জমীদারদিগের বসতি ছিল, তাঁহারা জানিতেন যে, দেশে বিচার নাই, বাহুবল অথবা নবাবের ইচ্ছাই একমাত্র প্রবলশক্তি। সুতরাং তাঁহারা মুখে নবাবের অধীন বলিয়া পরিচয় দিলেও, কার্য্যতঃ বাহুবলে বাহুবল পরাস্ত করিবার জন্য, আবশ্যক মত সৈন্যদল পোষণ করিতেন; এবং সর্ব্বদা সতর্ক প্রহরীর মত আত্ম-পার্শ্ব রক্ষা করিতেন। সিংহাসন লইয়া নওয়াজেসের সঙ্গে কলহবিবাদ উপস্থিত হইলে, এই শ্রেণীর নাগরিকগণ যে ইঙ্গিতমাত্রে নওয়াজেসের পক্ষাবলম্বন করিবেন, তাহা বুঝিতে সিরাজদ্দৌলার বিলম্ব হইল না।

 দৈশে যুদ্ধব্যবসায়ী লোকের অভাব ছিল না। আজ যে বাঙ্গালী রাজানুমতি না লইয়া একখানি জরাজীর্ণ পুরাতন তরবারিও ব্যবহার করিতে পারে না, আজ যে বাঙ্গালী মসীমলিনমূর্ত্তি হাব্‌সী অপেক্ষাও অস্ত্রব্যবহারের অযোগ্য বলিয়া রাজবিধির কঠিন নিগড়ে আবদ্ধ হইয়া পড়িয়াছে, সেই বাঙ্গালীও তখন অশ্বারোহী ও পদাতিক দলে প্রবেশ করিত, এবং প্রতিভা ও রণকৌশল থাকিলে সেনাপতি-পদেও অভিষিক্ত হইত। বাঙ্গালী হিন্দুস্থানী হিন্দু মুসলমান, এবং পর্ত্তূগিজ ফরাসী ওলন্দাজগণও সৈন্যদলে প্রবেশ করিবার প্রত্যাশায়, দলে দলে দেশে দেশে ঘুরিয়া,