পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কাশিমবাজার অবরোধের কারণ।
১৪৭

 উদ্ধত ইংরাজের কুটিল কৌশল সিরাজদ্দৌলার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ধূলি নিক্ষেপ করিতে পারিল না। তিনি যখন রাজমহল পর্য্যন্ত আসিয়া পৌঁছিয়াছেন, সেই সময়ে ড্রেক সাহেবের পত্রখানি তাঁহার হস্তগত হইল। পত্র পড়িয়া সিরাজদ্দৌলা একেবারে আগুন হইয়া উঠিলেন, পাত্রমিত্র আত্মীয় অন্তরঙ্গ,—যাহারা তাঁহার কাছে দাঁড়াইয়া ছিলেন, কেহই সাহস করিয়া বাঙ্নিষ্পত্তি করিতে পারিলেন না।[১] সিরাজদ্দৌলা গর্জ্জন করিয়া উঠিলেন;—অভিমানিনী কালসাপিনী পদাহতা হইয়া যেমন সফেন হলাহলকণা বিকিরণ করিতে করিতে ঊর্দ্ধ-শিরে গর্জ্জন করিয়া উঠে, সেইরূপ তীব্র তেজে গর্জ্জন করিয়া উঠিলেন। সমুদয় হস্ত্যশ্ব রথ পদাতি আজ্ঞামাত্রে পটমণ্ডপ উঠাইয়া লইয়া আবার মুর্শিদাবাদ অভিমুখে মহাকলরবে ধাবিত হইল; সকলেই বুঝিল যে, এবার আর ইংরাজের নিস্তার নাই! এই মুহূর্ত্ত হইতে সিরাজদ্দৌলার ইতিহাস রুধির-কর্দ্দমে কলঙ্কিত হইবার সুত্রপাত হইল। রাজমহলের পটমণ্ডপে উদ্ধত ইংরাজের অসংযত লেখনী সিরাজদ্দৌলার অদৃষ্ট ক্ষেত্রে যে বিষবৃক্ষের বীজ বপন করিল, সিরাজদ্দৌলার পরবর্ত্তী জীবনকাহিনী কেবল সেই বিষবৃক্ষের ক্রমবিকাশের শোচনীয় ইতিহাস![২]

 জগতের স্বাধীন নরপতিদিগের তুলনা লইয়া সিরাজদ্দৌলার এই রাজরোষের সমালোচনা করিতে হইলে কেহই তাঁহাকে ভর্ৎসনা করি

  1. Stewart's History of Bengal.}}
  2. নবাবী আমলের বাঙ্গালার ইতিহাসে লিখিত হইয়াছে;— ইহাতে ইংরাজগণের উপর আক্রোশ বৃদ্ধির কোন ন্যায়সঙ্গত কারণ দেখা যায় না।”(২১৬ পৃষ্ঠা।) আবার ২১২ পৃষ্ঠায় লিখিত হইয়াছে—“প্রেরিত দূতের অবমাননা ও দুর্গনির্ম্মাণব্যাপারে ইংরেজ অধ্যক্ষের প্রত্যুত্তর, সিরাজদ্দৌলার ক্রোধসঞ্চারের পক্ষে যথেষ্ট কারণ সন্দেহ নাই।”