পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০৮
সিরাজদ্দৌলা।

 এই স্মৃতিস্তম্ভ এখন আর দেখিতে পাওয়া যায় না।[১] তাহা বর্ত্তমান শতাব্দীর প্রারম্ভে, মারকুইস্ অব হেষ্টিংসের শাসন-সময়ে (১৮২১ খৃষ্টাব্দে) “কষ্টম ঘর” নির্ম্মাণ করিবার জন্য ভাঙ্গিয়া ফেলা হইয়াছে!! অন্ধকূপ হত্যাকাণ্ডে যাহারা জীবনবিসৰ্জ্জন করিয়াছিল, তাহাদের শবদেহের সমাধিগহ্বরের উপর এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্ম্মিত হইয়াছিল;— ইতিহাসে এইরূপই লিখিত আছে। তজ্জন্য তাহা সকল জাতির নিকটেই পবিত্র বলিয়া পরিগণিত হইতে পারিত, এবং খ্রীষ্টিয়ান ইংরাজ স্বাভাবিক ধর্ম্মবুদ্ধিবশতই তাহাকে রক্ষা করিতে বাধ্য হইতেন। অন্ধকূপকাহিনী সত্য হইলে, সেই পবিত্র সমাধিস্তম্ভ ধূলিসাৎ হইতে পারিত না সামান্য “কষ্টম ঘরের” স্থান সংকুলনের জন্য এরূপ পবিত্র সমাধিমন্দিরে লৌহদণ্ডাঘাত করিলে খৃষ্টীয়-সমাজ সে বর্ব্বরতা সহ্য করিতেন না! এই সমাধিস্তম্ভ ধূলিসাৎ হইল, অথচ কেহ ক্ষীণস্বরেও প্রতিবাদ করিলেন না?[২] একজন ইংরাজ লেখক ইহার একটি মুখরোচক সুন্দর কৈফিয়ৎ সৃষ্টি করিয়া লিখিয়া গিয়াছেন যে, “বোধ হয় বৃটিশ বাহিনীর পরাজয়কলঙ্কের স্মৃতিস্তম্ভ বলিয়াই ইহাকে লোকচক্ষুর অন্তরাল

  1. অষ্টাদশ শতাব্দীতে যে স্মৃতিস্তম্ভ নির্ম্মিত হইয়াছিল তাহা ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে ভাঙ্গিয়া ফেলা হয়। আবার বিংশ শতাব্দীর প্রথম বর্ষে সেই স্মৃতিস্তম্ভ পুননির্ম্মিত হইতেছে। প্রথমে লালদিঘীর উত্তর পশ্চিম কোণে স্যর এসলি ইডেনের প্রস্তরমূর্ত্তি স্থানান্তরিত করিয়া হলওয়েলের স্মৃতিস্তম্ভ নির্ম্মিত করিয়া অল্প কয়েক দিন পরে ভাঙ্গিয়া ফেলা হয়; আবার পোষ্টাপিসের পার্শ্বে তাহা নির্ম্মিত হইতেছে!
  2. কলিকাতায় এবং অন্যান্য স্থানে সেকালের ইংরাজদিগের যে সকল জরাজীর্ণ সমাধিক্ষেত্র দেখিতে পাওয়া যায়, তাহা আজিও কত যত্নে, কত ব্যয়ে, কত সমাদরে রক্ষিত হইতেছে! আর এমন পবিত্র সমাধিস্তম্ভ বিলুপ্ত হইল,—অথচ কেহ কোনরূপ উচ্চবাচ্য করিলেন না!