পাতা:সিরাজী উপন্যাস সমগ্র.pdf/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করাইতে লাগিলেন। রাজচিকিৎসকগণ বহু চেষ্টায় জুর বন্ধ করিতে সক্ষম হইলেন বটে, কিন্তু ক্ষত আরোগ্য হইল না, বরং জর বন্ধ হইবার পরে ক্ষত কিছু বাড়িতে লাগিল! তাহাতে ঈসা খাঁ জীবন সম্বন্ধে নিরাশ হইয়া পড়িলেন। তাহার বাহু হইতে ছয় অঙ্গুলি দীর্ঘ এবং তিন অঙ্গুলি চওড়া স্থানের ক্ষত কাটিয়া ফেলিয়া সেই স্থলে যদি কোন সুস্থ এবং নির্দোষ-রক্ত যুবা ব্যক্তির বাহুর সেই অংশ কাটিয়া বসাইয়া দেওয়া হয়, তাহা হইলে এই ক্ষত আরোগ্য হইতে পারে। ‘জোবাদাতল হােকামা’ আহমদুল্লাহ খানের এ মত, অন্যান্য হাকিমগণের দ্বারা সমর্থিত হইলে, সোলতান নিজাম শাহ প্ৰাণদণ্ডে দণ্ডিত আসামীদিগের মধ্য হইতে একজন সুস্থাকায় যুবকের বাহুর মাংসচ্ছেদ করিয়া ঈসা খাঁর ক্ষতস্থানে বসাইবার প্রস্তাব করিলেন। কিন্তু ঈসা খাঁ তাহাতে ঘোরতর আপত্তি প্ৰকাশ করিলেন । তাহার জন্য আর এক ব্যক্তির প্রাণসংশয় ব্যাপার এবং ভীষণ ক্লেশ উপস্থিত হইবে, তাহা তিনি সহ্য করিতে পরিবেন না। তাঁহাকে অনেক বুঝান হইল, কিন্তু তিনি কিছুতেই সন্মত হইলেন না। বরং উত্তরোত্তর বিরক্ত এবং উত্তেজিত হইয়া উঠিলেন। তাহার জন্য কোন ব্যক্তির মাংসচ্ছেদ করিলে তিনি নিজের গলায় ছুরি লাইবেন, ইহাও দৃঢ়তার সহিত জানাইলেন। স্বর্ণ নিজ বাহু হইতে মাংস দিবার জন্য বিষম আকুলতা প্ৰকাশ করিতে লাগিল, কিন্তু ঈসা খাঁ তাহাতেও সম্মত হইলেন না। স্বর্ণ অনেক বুঝাইল, অনেক কাঁদিল, অবশেষে ঈসা খাঁর পদতলে कनिष्ठ भ्रांत्रिल ना । স্বৰ্ণ বলিল ৪ আপনার প্রাণই। যদি রক্ষা না হয়, তা হলে আমার প্রাণের জন্য কিছুই মমতা নাই। আপনার জীবনেই আমার জীবন। আমি প্রাণ দিয়েও ” আপনাকে রক্ষা করব। আপনি না বাঁচলে, আমিও বাঁচব না। আমি প্ৰাণ দিয়ে আপনার জীবন রক্ষা করতে পারলেও সুখী হব। মাংস ছেদনে যে কষ্ট হবে, তা আমার সুখ এবং শান্তির কারণ হবে। আমাকে বেইস করেও কাটতে হবে না। আমি নিজ হন্তে মাংস ছেদন করে দিব । কিন্তু ঈসা খাঁ কিছুতেই সম্মত হইলেন না। অগত্যা স্বর্ণ নিরুপায় হইয়া আরও উদ্বিগ্ন হইয়া পড়িল। ঈসা খাঁর প্রাণরক্ষার জন্য স্বর্ণের ব্যাকুলতা এবং কাতরতা দর্শনে সকলেই বিস্মিত হইলেন। ঈসা খার প্রতি স্বর্ণের স্বগীয় প্ৰেম এবং অপার্থিব অনুরাগ সন্দর্শনে সকলেই তাহার প্রতি শ্রদ্ধাবান হইয়া পড়িলেন। তাহার মিত্ত এবং সুন্দর মুখমণ্ডলের পুণ্যশ্ৰী এবং উদার ও কাতর দৃষ্টিতে সকলেই তাহার দেব-হৃদয়ের পরিচয় পাইয়া পরম পুলকিত হইলেন। আয়েশা খানম পর্যন্ত স্বর্ণকে পরম যত্ন ও আদর করিতে লাগিলেন। স্বর্ণের গুণে এবং অনুরাগে আয়েশা খানম এইরূপ মুণ্ড এবং লুব্ধ হইয়া পড়িলেন যে, স্বৰ্ণকে Rofର পুত্রবধুরূপে পাইবার জন্য মনে মনে কল্পনা করিতে লাগিলেন। »o(ዮ