$88 সীতারাম একাকী দুর্গদ্বারে যাইতে দেখিলেন যে, যে বেদীতে জয়ন্তীকে বেত্ৰাঘাতের জন্য আরূঢ় করিয়াছিলেন, সেই বেদীতে দুই জন কে বসিয়া রহিয়াছে। সেই মৃত্যুকামী যোদ্ধারও হৃদয়ে ভয়সঞ্চার হইল। শশব্যস্তে নিকটে আসিয়া দেখিলেন–ত্রিশূল হস্তে, গৈরিকভস্মরুদ্রাক্ষবিভূষিতা, জয়ন্তীই পা ঝুলাইয়া বসিয়া আছে। তাহার পাশে, সেইরূপ ভৈরবীবেশে শ্রী । রাজা তাহাদিগকে সেই বিষম সময়ে, তাহার আসন্নকালে, সেই বেশে সেই স্থানে সমাসীন দেখিয়া কিছু ভীত হইলেন। বলিলেন, “তোমরা আমার এই আসন্নকালে, এখানে আসিয়া কেন বসিয়া আছ ? তোমাদের এখনও কি মনস্কামনা সিদ্ধ হয় নাই ?” জয়ন্তী ঈষৎ হাসিল । রাজা দেখিলেন, শ্ৰী গদগদকণ্ঠ, সজললোচন—কথা কহিবে ইচ্ছা করিতেছে, কিন্তু কথা কহিতে পারিতেছে না। রাজা তাহার মুখপানে চাহিয়া রহিলেন। শ্রী কিছু বলিল না। রাজা তখন বলিলেন, “ঐ ! তোমারই অদৃষ্ট ফলিয়াছে। তুমিই আমার মৃত্যুর কারণ । তোমাকে প্রিয়প্রাণহস্ত্রী বলিয়া আগে ত্যাগ করিয়া ভালই করিয়াছিলাম। এখন অদৃষ্ট ফলিয়াছে—আর কেন আসিয়াছ ?” শ্ৰী। অামার অনুষ্ঠেয় কৰ্ম্ম আছে—তাহা করিতে আসিয়াছি। আজ তোমার মৃত্যু উপস্থিত, আমি তোমার সঙ্গে মরিতে আসিয়াছি। রাজা । সন্ন্যাসিনী কি অনুসৃত হয় ? শ্ৰী। সন্ন্যাসীই হউক, আর গৃহীই হউক, মরিবার অধিকার সকলেরই আছে। রাজ। সন্ন্যাসীর কৰ্ম্ম নাই। তুমি কৰ্ম্মত্যাগ করিয়াছ—তুমি আমার সঙ্গে মরিবে কেন ? আমার সঙ্গে, নন্দ যাইবে, প্রস্তুত হইয়াছে। তুমি সন্ন্যাসধৰ্ম্ম পালন কর। শ্ৰী। মহারাজ ! যদি এত কাল আমার উপর রাগ করেন নাই, তবে আজ আর রাগ করিবেন না। আমি আপনার কাছে যে অপরাধ করিয়াছি—ত এই আপনার আর আমার আসন্ন মৃত্যুকালে বুঝিয়াছি। এই আপনার পায়ে মাথা দিয়া,— এই বলিয়া শ্ৰী মঞ্চ হইতে নামিয়া, সীতারামের চরণের উপর পড়িয়া, উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিল, “এই তোমার পায়ে হাত দিয়া বলিতেছি—আমি আর সন্ন্যাসিনী নই। আমার অপরাধ ক্ষমা করিবে ? আমায় আবার গ্রহণ করিবে ?” সী । তোমায় ত বড় আদরেই গ্রহণ করিয়াছিলাম—এখন আর ত গ্রহণের সময় নাই ।
পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৫২
অবয়ব