পাতা:সীতার বনবাস - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮
সীতার বনবাস।

স্বরে বলিতে লাগিলেন, যদি আর আমার চেতনা না হইত, আমার পক্ষে সর্ব্বাংশে শ্রেয়স্কর হইত; নিরপরাধ জানকীয়ে বিসর্জন দিয়া, দুরপনেয় পাপপঙ্কে লিপ্ত হইতে হইত না। এই মাত্র, অষ্টাবক্রের সমক্ষে, প্রতিজ্ঞা করিলাম, যদি লোকরূঞ্জনের অনুরোধে, জানকীরেও বিসর্জন দিতে হয়, তাহাও করিব। এরূপ ঘটিবে বলিয়াই কি, আমার মুখ হইতে তাদৃশ বিষম প্রতিজ্ঞাবাক্য নিঃসৃত হইয়াছিল। হা প্রিয়ে জানকি! হা প্রিয়বাদিনি! হা রামময়জীবিতে! হা অরণ্যবাসসহচরি! পরিণামে তোমার যে এরূপ অবস্থা ঘটিবে তাহা স্বপ্নের অগোচর। তুমি এমন দুরাচারের, এমন নরাধমের, এমন হতভাগ্যের হস্তে পড়িয়াছিলে, যে, কিঞ্চিৎ কালের নিমিত্তও, তোমার ভাগ্যে সুখভোগ ঘটিয়া উঠিল না। তুমি, চন্দনতরুবোধে, দুর্বিপাক বিষবৃক্ষের আশ্রয়গ্রহণ করিয়াছিলে। আমি পরম পবিত্র রাজবংশে জন্মগ্রহণ করিয়াছি বটে; কিন্তু আচরণে চণ্ডাল অপেক্ষা সহস্র গুণে অধম; নতুবা, ‘বিনা অপরাধে, তোমায় বিসর্জন দিতে উদ্যত হইব কেন? হায়! যদি এই মুহূর্ত্তে আমার প্রাণবিয়োগ ঘটে, তাহা হইলে, আমি পরিত্রাণ পাই। আর বাঁচিয়া ফল কি; আমার জীবিত প্রয়োজন পর্য্যবসিত হইয়াছে; জগৎ ‘ শূন্য ও জীর্ণ অরণ্য প্রায় প্রতীয়মান হইতেছে।

 এইরূপ বলিতে বলিতে, একান্ত আকুলহৃদয় ও কম্পমান-