পাতা:সীতার বনবাস - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ।
২৯

কলেবর হইয়া, রাম কিয়ৎ ক্ষণ স্তব্ধ হইয়া রহিলেন; অনন্তর, দীর্ঘ নিশ্বাস সহকারে, হায়! কি হইল বলিয়া, নিরতিশয় কাতর বাক্যে বলিতে লাগিলেন,—হা মাতঃ! হা তাত জনক! হা দেবি বসুন্ধরে! হা ভগবতি অরুন্ধতি! হা কুলগুরো বশিষ্ঠ! হা ভগবন্‌ বিশ্বামিত্র! প্রিয়বন্ধো বিভীষণ! হা পরমোপকারিন্‌ সখে সুগ্রীব! হা বৎস অঞ্জনা হৃদয়নন্দন! তোময়া কোথায় রহিয়াছ, কিছুই জানিতে পারিতেছ না; এখানে দুরাত্মা রাম তোমাদের সর্ব্বনাশে উদ্যত হইয়াছে। অথবা, আর আমি তাদৃশ মহাত্মাদিগের নামগ্রহণে অধিকারী নহি; আমার ন্যায় মহাপাতকী নামগ্রহণ করিলে, নিঃসন্দেহ তাঁহাদের পাপস্পর্শ হইবে। আমি যখন সরলহৃদয়া, শুদ্ধচারিণী, পতিপ্রাণা কামিনীরে, নিতান্ত নিরপরাধ জানিয়াও অনায়াসে বিসর্জন দিতে উদ্যত হইয়াছি, তখন আমা অপেক্ষা মহাপাতকী আর কে আছে? হা রামময়জীবিতে! পাষাণময় নৃশংস রাম হইতে, পরিণামে তোমার যে এরূপ দুর্গতি ঘটিবে, তাই তুমি স্বপ্নেও ভাব নাই। নিঃসন্দেহ, রামের হৃদয় বজ্রলেপময়; নতুবা এখনও বিদীর্ণ হইতেছে না কেন? অথবা, বিধাতা, জানিয়া শুনিয়াই, আমায় ঈদৃশ কঠিনহৃদয় করিয়াছেন; তাহা না হইলে; অনায়াসে এরূপ নৃশংস কর্ম্ম সম্পন্ন করিতে পারিব কেন?