পাতা:সীতার বনবাস - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮
সীতার বনবাস।

এ বিষয়ে প্রজাদিগের কিছুমাত্র দোষ নাই; আমাদের অপরিণামদর্শিতা ও অবিমৃশ্যকারিতা দোষেই, এই বিষম সর্ব্বনাশ ঘটিতেছে। যদি আমরা, অযযাধ্যায় আসিয়া, সমবেত পৌরগণ ও জানপদবর্গ সমক্ষে, জানকীর পরীক্ষা করিতাম, তাহা হইলে, তাহাদের অন্তঃকরণ হইতে তৎসংক্রান্ত সকল সংশয় অপসারিত হইত। সীতা, অলৌকিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া, স্বীয় শুদ্ধাচারিতার অসংশয়িত পরিচয়প্রদান করিয়াছেন বটে; কিন্তু, সেই পরীক্ষার যথার্থতা বিষয়ে প্রজালোকের সম্পূর্ণ বিশ্বাস নাই। বোধ করি, অনেকে পরীক্ষাব্যাপারের বিন্দু বিসর্গ অবগত নহে। সুতরাং, সীতায় চরিত্র বিষয়ে তাহাদের সংশয় দূর হয় নাই। বিশেষতঃ, রাবণের চরিত্র, ও বহু কাল একাকিনী সীতার তদীয় আলয়ে অবস্থান, এ দুই বিষয়ের বিবেচনা করিলে, সীতার চরিত্র বিষয়ে সন্দিহান হওয়া আশ্চর্য্যের বিষয় নহে। অতএব, আমি প্রজাদিগকে কোনও অংশে দোষ দিতে পারি না। আমারই অদৃষ্টবৈগুণ্য বশতঃ, এই উপদ্রব উপস্থিত হইতেছে। আমি যদি রাজ্যের ভারগ্রহণ না করিতাম; এবং, ধর্ম্ম সাক্ষী করিয়া, প্রজারঞ্জনপ্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ না হইতাম; তাহা হইলে, অমুলক লোকাপবাদে অবজ্ঞাপ্রদর্শন করিয়া, নিরুদ্বেগে সংসারযাত্রানির্বাহ করিতাম। যদি রাজা হইয়া প্রজারঞ্জন করিতে না পারিলাম, তাহা হইলে, জীবনধারণের ফল কি?