পাতা:সীতার বনবাস - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চতুর্থ পরিচ্ছেদ।
৪৩

যে এই সকল মনোহর প্রদেশ, দেখিতেছি, ইহা কেবল আর্য্যপুত্রের প্রসাদের ফল; তিনি প্রসন্ন মনে অনুমোদন করিলে, আমার ভাগ্যে এ প্রীতিলাভ ঘটিয়া উঠিত না। আমি যেমন আহ্লাদ করিয়া প্রার্থনা করিয়াছিলাম, তিনিও তেমনই অনুকূলতাপ্রদর্শন করিয়াছেন। লক্ষ্মণ, মুগ্ধভাবা সীতার এইরূপ হর্ষাতিশয় দেখিয়া, এবং, অবশেষে রামচন্দ্র কিরূপ অনুকূলতাপ্রদর্শন করিয়াছেন, তাহা ভাবিয়া, মনে মনে ম্রিয়মাণ হইলেন; অতি কষ্টে উচ্ছলিত, শোকাবেগের সংবরণ করিলেন; এবং, অনেক যত্নে, ভাবগোপন করিয়া, সীতার ন্যায় হর্ষপ্রদর্শন করিতে লাগিলেন।

 এই ভাবে কিয়ৎ দূর গমন করিলে পর, সীতা সহসা ম্লানবদনা হইয়া লক্ষণকে বলিলেন, বৎস, এত ক্ষণ আমি মনের আনন্দে আসিতেছিলাম; কিন্তু সহসা আমার ভাবান্তর উপস্থিত হইল। দক্ষিণ নয়ন অনবরত স্পন্দিত হইতেছে; সর্ব্ব শরীর কম্পিত হইতেছে; অন্তঃকরণ, যার পর নাই, ব্যাকুল হইতেছে; পৃথিবী শূন্যময় দেখিতেছি। অকস্মাৎ এরূপ চিত্তচাঞ্চল্য ও অসুখের আবির্ভাব হইল কেন! কিছুই বুঝিতে পারিতেছি না। না জানি, আর্য্যপুত্র কেমন আছেন। হয় তাঁহার কোনও অশুভঘটনা হইয়াছে, নয় প্রাণাধিক ভরত ও শত্রুঘ্নের কোনও অনিষ্ট ঘটিয়াছে; কিংবা ভগবান্‌ ঋষ্যশৃঙ্গের আশ্রম হইতেই কোনও অশুভ সংবাদ আসিয়াছে;