পাতা:সীতার বনবাস - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
সীতার বনবাস।

আমার তাদৃশ চিত্তবৈকল্য ঘটিয়াছিল। যাহা হয়, ত্বরায় বলিয়া, আমায় জীবনদান কর; আমার যাতনার একশেষ হইতেছে। ত্বরায় বল, আর বিলম্ব করিও না। আমি স্পষ্ট বুঝিতেছি, আমারই সর্ব্বনাশ ঘটিয়াছে; না হইলে, এমন সময়ে, তুমি এত ব্যাকুল হইতে না।

 সীতার এইরূপ ব্যাকুলতা ও কাতরতা দর্শনে, লক্ষ্মণের শোকানল শতগুণ প্রবল হইয়া উঠিল; নয়নযুগল হইতে অনর্গল অশ্রুজল নির্গত হইতে লাগিল; কণ্ঠরোধ হইয়া, বাক্যনিঃসরণ রহিত হইয়া গেল। যত নিষ্ঠুর হউক না কেন, অবশেষে অবশ্যই বলিতে হইবে, এই ভাবিয়া, লক্ষ্মণ বলিবার নিমিত্ত বারংবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন; কিন্তু, কোনও ক্রমে, তাঁহার মুখ হইতে তাদৃশ নিষ্ঠুর বাক্য নির্গত হইল না। তাঁহাকে এতাদৃশ অবস্থাপন্ন দেখিয়া, সীতা তাঁহার হস্তে ধরিয়া, ব্যাকুল চিত্তে, কাতর বচনে, বারংবার এই অনুরোধ করিতে লাগিলেন, বৎস, আর বিলম্ব করিও না; আর্য্যপুত্র যে আদেশ করিয়াছেন, তাহা, যত নিষ্ঠুর হউক না কেন, ত্বরায় বল; তুমি কিছুমাত্র সঙ্কুচিত হইও না; আমি অনুমতি দিতেছি, তুমি নিঃশঙ্ক চিত্তে বল। তোমার কথা শুনিয়া ও ভাব দেখিয়া, স্পষ্ট বোধ হইতেছে, আমারই কপাল ভাঙিয়াছে। কি হইয়াছে, করায় বল, আর বিলম্ব করিও না; আমি, আর এক মুহূর্ত্ত