পাতা:সীতার বনবাস - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চতুর্থ পরিচ্ছেদ।
৪৯

আমার অদৃষ্টে যে এরূপ ঘটিবে, তাহা আমি স্বপ্নেও জানিতাম না। যে দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে, তাহা মনে করিয়া, আমার হৃদয় বিদীর্ণ হইয়া যাইতেছে। ইতঃপূর্ব্বে আমার মৃত্যু হইলে, আমি সৌভাগ্যজ্ঞান করিতাম। যদি মৃত্যু অপেক্ষা, কোনও অধিকতর দুর্ঘটনা থাকে, তাহাও আমার পক্ষে শ্রেয়স্কর ছিল; তাহা হইলে, আজ আমায় এরূপ নিষ্ঠুর কাণ্ডের ভারগ্রহণ করিতে হইত না। হা বিধাতঃ! তোমার মনে কি এই ছিল! এই বলিয়া, উন্মূলিত তরুর ন্যায়, ভূতলে পতিত হইয়া, লক্ষণ হাহাকার করিতে লাগিলেন।

 সীতা, লক্ষণের ঈদৃশ অভাবিত ভাবান্তর উপস্থিত দেখিয়া, কিয়ৎ ক্ষণ, স্তব্ধ ও হতবুদ্ধি হইয়া, দণ্ডায়মান রহিলেন; অনন্তর, হস্তধারণ পূর্ব্বক, তাঁহাকে ভূতল হইতে উঠাইয়া, অঞ্চল দ্বারা তদীয় নয়নের অশ্রুমার্জ্জন করিয়া দিলেন; এবং, তিনি কিঞ্চিৎ শান্ত হইলে, কাতর বচনে জিজ্ঞাসা করিলেন, বৎস, কি কারণে, তুমি এত ব্যাকুল হইলে? কি জন্যই বা, তুমি মৃত্যুকামনা করিলে? তোমায় একান্ত বিকলচিত্ত দেখিতেছি; অল্প কারণে, তুমি কখনই এত আকুল ও এত অস্থির হও নাই। বলি, আর্য্যপুত্রের ত কোনও অমঙ্গল ঘটে নাই? তুমি তদগতপ্রাণ; তোমার ভাব দেখিয়া বোধ হইতেছে, তাঁহারই অমঙ্গল ঘটিয়াছে। আমি এখন বুঝিতে পারিতেছি, এই জন্যই, কল্য অপরাহ্নে