পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ইঁটের মতো চাকা বঁধিয়া রাখে, তাহা হইলেই-বা কেমন হয়? আফ্রিকা দেশে অনেক জায়গায় এরকম জিনিস অহরহই দেখিতে পাওয়া যায়।

সন্দেশ—অগ্রহায়ণ, ১৩২৪


গাছের ডাকাতি

 ধীর শান্ত ক্ষমাশীল লোকের কথা বলতে হলে আমাদের দেশে গাছের সঙ্গে তার তুলনা দেওয়া হয়—'তরোরিব সহিষ্ণুণা'। গাছের মহত্ত্বের কথা ছেলেবেলায় কত যে পড়েছি এখনো তার কিছু কিছু মনে পড়ে! 'ছেত্তুঃ পার্শ্ব গতাচ্ছায়াং নেপসংহরতি দ্রুমঃ - যে লোক পাশে বসে গাছের ডাল কাটছে তার কাছ থেকেও গাছ তার ছায়াটুকু সরিয়ে নেয় না। আরো শুনেছি, ‘কঠিন অপ্রিয় বাক্য করিলে শ্রবণ, রক্তজবা রাগ ধরে মনুজ লোচন। ইহাদের শিরোপরে লোষ্ট্র নিক্ষেপণে, সুফল প্রদান করে বিনম্র বদনে।' এমন যে শান্ত নিরীহ গাছ সেও নাকি আবার অত্যাচার করে। নানারকম কৌশল কয়ে, বিষ ঢেলে, ফাঁদ পেতে, হুল্ ফুটিয়ে, সঙ্গিন চালিয়ে, গেলা মেরে, সাঁড়াশি বিঁধিয়ে কত উপায়ে যে তারা দৌরাত্মি করে তা শুনলে পরে তোমরা বলবে ‘গাছের পেটে এত বিদ্যে'।

 এর আগে শিকারী গাছের কথা বলেছি। তাতে গাছের কেমন করে অশ্চর্যরকম ফাঁদ পেতে পোকামাকড় ধরে খায়, তার গল্প দেওয়া হয়েছিল। তারা নানারকম লোভ দেখিয়ে, রঙের ছটায় মন ভুলিয়ে পোকাদের সব ডেকে আনে। কিন্ত যারা আসে তারা আর ফিরে যায় না। মধু খেতে খেতে কখন যে তারা ফাঁদের মধ্যে গিয়ে পড়ে সেটা তাদের খেয়ালই থাকে না। কখন হঠাৎ টপ্ করে ফাঁদের মুখ বুজে যায়, কিংবা গাছের আঠালো রসে তাদের পা আটকিয়ে যায়, কিংবা ফাঁদের মধ্যে পিছল পথে উঠতে গিয়ে আর উঠতে পারে না তখন বেচারাদের ছটফটানি সার। এরা মাংসাশী গাছ, পোকামাকড় খেয়ে এরা বেঁচে থাকে, তাই প্রাণের দায়ে একটু-আধটু হিংসাবৃত্তি না করলে এদের চলবে কেন?

 খোঁজ করলে দেখা যায়, অনেক সময় গাছে গাছেও লড়াই চলে। অল্পে অল্পে দিনের পর দিন নিঃশব্দে সে লড়াই চলতে থাকে। এক জায়গায় দশ-বিশটা গাছ থাকলেই তাদের মধ্যে কিছু না কিছু রেষারেষি বেধে যায়। সকলেই চায় প্রাণ ভরে আলো আর বাতাস পেতে–সুতরাং যারা প্রবল তারা গায়ের জোরে সকলকে ঠেলেঠুলে বেড়ে ওঠে আর দুর্বল বেচারিরা আড়ালে অন্ধকারে শুকিয়ে মরে।

 এক-একরকম গাছ থাকে তাদের কেমন অভ্যাস, তারা অন্য গাছের গায়ে পড়ে পাক দিয়ে উঠে তার পর তাদের চিপ্‌সে মারে। এক-এক সময় দেখা যায়, একটা গাছ সিন্ধবাদের বুড়োর মতো আর-একটা গাছের ঘাড়ে চেপে রয়েছে। গাছের অন্য বিদ্যা যেমনই থাক, সে তো হনুমানের মতো লাফাতে পারে না, তা হলে সে অন্যের ঘাড়ে চড়ল কি করে? চড়তে হয় নি, ঐ ঘাড়ের উপরেই তার জন্ম হয়েছে। ঐখানে কবে কোন

২০২
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২