পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সে জাহাজকে পথ দেখাইয়া লইতে চায়। মাঝে মাঝে জাহাজের গায়ে গা ঘষিয়া আর ঢেউয়ের ফেনায় ডিগবাজি খাইয়া সে নানারকমে মনের আহ্লাদ প্রকাশ করে।

 সেখানকার নাবিকেরা সকলেই এই অদ্ভুত তিমির কথা জানে। তাহারা অদির করিয়া তাহার নাম দিয়াছে 'পেলোরাস্্ জ্যাক’—“পেলোরাস’ ঐ জায়গাটার নাম। এই তিমির সম্বন্ধে সেদেশে অনেকরকম অদ্ভুত গল্প শোনা যায়। একবার নাকি কোন জাহাজ হইতে কে একজন লোক ‘জ্যাক'কে গুলি করিয়াছিল—তার পর অনেকদিন তাহাকে দেখা যায় মাই। আবার সে ফিরিয়া আসিল বটে, কিন্তু সেই জাহাজটার কাছে আর কখনো আসে নাই। নিউজিল্যাণ্ড মাওরিদের দেশ—তাহারা এই তিমিকে দেবতার মতো ভক্তি করে। এমন-কি, সেদেশের গভর্নমেণ্ট পর্যন্ত ইস্তাহার দিয়া সকলকে অনুরোধ করিয়াছেন যে, কেহ যেন ‘জ্যাকে’র কোনোরকম অনিষ্ট না করে।

সন্দেশ -শ্রাবণ, ১৩২৪


গোখুরো শিকার

 এক সাহেবের আস্তাবলে ইঁদুরে বাসা বেঁধেছিল। তারা অস্তাবলের মেজের নীচে গর্ত খুঁড়ে খুঁড়ে একেবারে ঝাঁঝরার মতো করে ফেলেছিল। ইঁদুরের উৎপাতে সবাই ব্যতিব্যস্ত। কতদিন কল পেতে কত ইঁদুর ধরা পড়ল, তবু ইঁদুর আর ফুরায় না। তখন সাহেব ভাবলেন ইদুর মরিবার বিষবড়ি না বানালে আর চলছে না। কিন্তু তার পরেই হঠাৎ একদিন দেখা গেল, আস্তাবলের সব ইঁদুর কোথায় পালিয়েছে। সবাই বলল, “ব্যাপারখানা কি?” দুদিন না যেতেই বোঝা গেল, ব্যাপার বড়ো গুরুতর-ইঁদুরের গর্তে প্রকাণ্ড দুই গোখরো সাপ এসে আশ্রয় নিয়েছে। আস্তাবলে মহা হুলস্থুল পড়ে গেল, সহিস কোচম্যান সব চলতে ফিরতে সাবধানে থাকে, রাত্রে গাড়ি জুততে হলে লোকজন, লাঠি, মশাল নানারকম হাঙ্গামার দরকার হয়, তা নইলে কেউ ঘরে ঢুকতেই চায় না। সাহেব দেখলেন মহা মুশকিল, এর চাইতে ইদুরই ছিল ভালো।

 সাহেবের যে চাপরাসী, সে লোকটি ভারি সেয়ানা-সে বললে, “হুজুর, আমি সাপ তাড়াবার ফন্দি জানি। আমায় চার-আনা পয়সা দিন, আমি এখনি তার সরঞ্জাম কিনে আনছি।” পরের দিন চাপরাসী সেই চার-অনার সরঞ্জাম নিয়ে হাজির-একটা বঁড়শি আর ছিপ আর একটা ঠোঙার মধ্যে জ্যান্ত ব্যাঙ। দেখে সবাই হাসতে লাগল আর চাপরাসীকে ঠাট্টা। করতে লাগল। সাহেব বললেন, “বেয়াকুফ। তোকে সাপ মারতে বললাম, আর তুই মাছ ধরবার সরঞ্জাম এনে হাজির করলি?” চাপরাসী সে-সব কথায় কান না দিয়ে ব্যাঙটাকে বঁড়শিতে গেঁথে আস্তাবলের দিকে চলল। তামাশা দেখবার জন্য সবাই তার পিছন পিছন চলল। তার পর সেই ছিপে-গাথা ব্যাঙটাকে গর্তের মধ্যে ছেড়ে দিয়ে চাপরাসী শক্ত করে ছিপের গোড়ায় ধরে বসে রইল। খানিক পরে ছিপে টান পড়তেই অমনি সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠল। আর চাপরাসী সেই আধ-গেলা ব্যাঙসুদ্ধ একটা প্রকাণ্ড সাপকে গর্তের মধ্যে থেকে

জীবজন্তুর কথা
৩২১
সু.স.র.-২-৪০