পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সত্যবাইন । ঐ করেই তো আপনারা গেলেন । এদিকে ছেলেগুলোর শাসন-টাসনের দিকে আপনাদের এক ফোটা দৃস্টি নেই। শ্ৰীখণ্ড । শাসন আবার কি মশাই ? জানেন, ছেলেদের ধমক-ধামক শাসন এতে আমি অত্যন্ত ক্লেশ অনুভব করি । ভবদুলাল । আমারও ঠিক ঐরকম । আমি যখন পাটনায় মাস্টার ছিলুম--একদিন একেবারে বারো-চোদ্দোটা ছেলেকে আচ্ছা করে পিটিয়ে দেখলুম সন্ধ্যার সময় ভরি ক্লেশ হতে মাগল—হাত টনটন কাধে বাথা । সত্যবাহন । যাক, যে কথা বলছিলাম। আমরা আজ কদিন থেকে বিশেষভাবে চিন্তা করে বেশ বুঝতে পাবছি যে এদের শিক্ষার মধ্যে কতকগুলো গুরুতর গলদ থেকে যাচ্ছে । কেবল নিবিকল্প সত্যের অনুরোধেই আমি সেদিকে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বাধ্য হচ্ছি। যথা- ( পাঠ ) প্রথম সাম্যসাধনাদি অবশ্য সম্পাদনীয় বিষয় অনৈকাগ্রতা, অনভিনিবেশ ও চঞ্চলচিত্ততা । ভবদুলাল । চলচিত্তচঞ্চরি’—মনে হয়েছে । সত্যবাহন । বাধা দেবেন না । দ্বিতীয়—বিবিধ মৌলিক বিষয়ে সম্যক শিক্ষাভাবজনিত খণ্ডাখণ্ড বিচারহীনতা । তৃতীয়— বিবেক-বৃত্তির নানা বৈষম্যঘটিত আবিস্ম্যকারিতা-- ভবদুলাল । বড় দেরি হয়ে যাচ্ছে । সত্যবাহন । হোক দেরি । বিবেকরত্তির নানা বৈষম্য ঘটিত— ভবদুলাল । ওটা বলা হয়েছে-- সত্যবাহন । আঃ—নানা বৈষম্যঘটিত অবিমূৰ্য্যকারিতা ও আত্মপ্রচার-তৎপরতা । চতুর্থ-শ্রদ্ধা গান্তীযদি পরিপূর্ণ বিনয়বনতির ঐকান্তিক অভাব । পঞ্চম— শ্ৰীখণ্ড । দেখুন, ও-সব এখন থাক । আপনাদের এ-সব অভিযোগ আমরা অনেক শুনেছি। তার জবাব দেবার কোনো প্রয়োজন দেখি না । কিন্তু তা হলেও সম্যক শিক্ষাভাব বলে যেটা বলছেন সেটা একেবারে অন্যায় ৷ যেরকম সাবধানতার সঙ্গে উন্নত বিজ্ঞানসম্মত প্রণালীতে আমরা আধুনিক মেটাসাইকোলজিক্যাল প্রিসিপৃল্স অনুসারে সমস্ত শিক্ষা দিয়ে থাকি তার সম্বন্ধে এমন অভিযোগের কোনো প্রমাণ আপনি দিতে পারেন ? সত্যবাহন ৷ একশোবার পারি। তা হলে শুনবেন ? আপনাদেরই কোনো-এক ছাত্রের কাছে কোনো-একটি ভদ্রলোক খণ্ডাখণ্ডেরযে ব্যাখ্যা শুনলেন—আমাদের নিকুঞ্জবাবুর দাদা বলছিলেন সে একেবারে রাবিশ–মানেই হয় না । শ্ৰীখণ্ড । তাতে কি প্রমাণ হল ? ও তো একটা শোনা কথা । to সত্যবাহন। দেখুন, নিকুঞ্জবাবু আমার অত্যন্ত নিকট বন্ধু। তাঁর দাদাকে অবিশ্বাস করা আর আমাকে মিথ্যাবাদী বলা একই কথা । নাটক শ্ৰীখণ্ড । তাহলে দেখছি আপনাদের সঙ্গে কথা বলাই বন্ধ করতে হবে । সত্যবাহন। দেখুন, উত্তেজিত হবেন না । উত্তেজিত ভাবে কোনো প্রসঙ্গ করা আমাদের রীতি বিরুদ্ধ । ভবদুলাল। বড়ো দেরি হয়ে যাচ্ছে । সত্যবাহন । অঃ – কেন বাধা দিচ্ছেন ? জিজ্ঞাসা করি খণ্ডাথণ্ডের যে তত্ত্বপর্যায় সেটা আপনার স্বীকার করেন তো ? শ্ৰীখণ্ড । আমরা বলি, খণ্ড খণ্ডটা তত্ত্বই নয়— ওটা তত্ত্বভায় । আর সমসাম্য যেটাকে বলেন সেট সাধন নয়—সেটা ছে একটা রসভাল । আপনারা এ-সব এমনঙবে বলেন যেন খণ্ডাখণ্ড সমসাম সব একই কথা । আসলে তা নয় । আপন রা যেখানে বলেন—কেন্দ্রগতং নিবিশেষং, আমরা সেখানে বলিকেন্দ্রগতং নিবিশেষঞ্চ । কারণ ও-দুটো স্বতন্ত্র জিনিস। আপনারা যা আওড়াচ্ছেন ও-সব সেকেলে পুরোনো কথা—এ-যুগে ও-সব চলবে না। এ-কালের সাধন বলতে আমরা কি বুঝি ওনবেন—? ( ছাঞ্জের প্রতি ) বল তো, সাধন কাকে বলে । ছাত্র । নবাগত যুগের সাধন একটা সহজ বৈজ্ঞানিক প্রণালী যায় সাহায্যে একটা যে কোনো শবদ বা বস্তুকে অবলম্বন করে তারই ভিতর থেকে উত্তরোত্তর পযায়ক্রমে নানারকম অনুভূতির ধারাকে অব্যাহত স্বাভাবিকভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়। শ্ৰীখণ্ড । শুনলেন তো ? আপনাদের সঙ্গে আকাশ পাতালে তফাত । ওটা আবার বল তো হে । ছাত্র । ( পুনরাবৃত্তি ) সত্যবাহন । দেখুন, কোনো কথা ধীরভাবে শুনবেন সে সহিষ্ণুত আপনার নেই । অকাট্য কর্তব্যের প্রেরণায় আপনারই উপকারের জন্য এ কথা আজকে আমাকে বলতে হচ্ছে যে, ঐ অহংকার ও আত্মসর্বস্বতাই আপনার সর্বনাশ করবে। চলুন, ভবদুলালবাবু। ভবদুলাল । এই একটু শুনে যাই । বেশ লাগছে মন্দ না। সত্যবাহন । তা হলে শুনুন, খুব করে শুনুন । অকৃতজ্ঞ, বিশ্বাসঘাতক, পাষণ্ড— [ প্রস্থান ভবদুলাল। হ্যা, তার পর সেই বৈজ্ঞানিক প্রণালী । শ্ৰীখণ্ড । হ্যাঁ, ওটা এই আশ্রমের একটা বিশেষত্ব—একটা গ্রাজুয়েটেড সাইকো-থসিস অভ ফোনেটিক ফরম্স । ওটা অবলম্বন করে অবধি আমরা আশ্চর্য ফল পাচ্ছি। অথচ আমাদের প্রাথমিক শ্রেণীর ছাত্রেরা পর্যন্ত এর সাধন করে থাকে । মনে করুন যে-কোনো সাধারণ শব্দ বা বস্ত— কতখানি জোরের কথা একবার ভাবুন তো ? ভবদুলাল । চমৎকার! আমার চলচিত্তচঞ্চরিতে ওটা লিখতেই হবে । বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে যে কোনো সাধারণ শব্দ বা বস্তু—একটা দৃষ্ঠটান্ত দিতে পারেন ? শ্ৰীখণ্ড। হ্যা, মনে করুন গোরু । গো, রু । গো’ মানে কি ? গোস্বৰ্গপণ্ডবাকবস্তুদিও নেত্রঘুণিভূজলে’, গো মানে গোরু, ৩৯৯