পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাবুক ভবের পারে যায় । ভবের হাটে ভাবের খেলা, ভাবুক কেন ডোল ? ভাবের জমি চাষ দিয়ে ভাই ভবের পটোল তোল রে— ভাই ভবের পটোল তোল । শান বাঁধানো মনের ভিটেয় ভাবের ঘুঘু চরে— ভাবের মাথায় টোক্কা দিলে বাক্য-মানিক ঝরে রে মন বাক্য-মানিক ঝরে । ভাবের ভারে হদ কাবু ভাবুক বলে তায় ভাব-তাকিয়ায় হেলান দিয়ে ভাবের খাবি খায় রে ডাবুক ভাবের খাবি খায়। [ কীর্তন জমাট হওয়ায় ভাবুকদাদার নিদ্রচুীতি ভাবুক দাদা। জুতিয়ে সব সিধে করব, বলে রাখছি পঙ্গট— চ্যাচামেচি করে ব্যাটা ঘুমটি করলি নস্ট ? প্রথম ভাবুক। ঘুম কি হে ? সিকি কথা ? অবাক কল্লে খুব । ঘুমোওনি তো-ভাবের স্রোতে মেরেছিলে ডুব। ঘুমোয় যত ইতর লোকে—তেলী মুদী চাষা— তুমি আমি ভাবুক মানুষ ভাবের রাজ্যে বাসা । ভাবুক দাদা। সে ঘুম নয়, সে ঘুম নয় ভাবের ঝোকে টং, ভাবের কাজল চোখে দিয়ে দেখছি ভাবের রঙ , মহিষ যেমন পড়ে রে ভাই শুকনো নদীর পাকে, ভাবের পাঁকে নাকটি দিয়ে ভাবুক পড়ে থাকে। প্রথম ভাবুক। তাই তো বটে, মনের নাকে ভাবের তৈল ও জি ভাবের ঘোরে ডো হয়ে যাই চক্ষু দুটি বুজি । দ্বিতীয় ভাবুক। হাঃ হাঃ হা—দাদা তোমার রচনাগুলো খাসা, ভাবের চাপে জমাট, আবার হাস্য রসে ঠাসা । ভাবুক দাদা। ভাবের বেঁকে দেখতেছিলেম স্বপ্ন চমৎকার কোমর বেঁধে ভাবুক জগৎ ভবের পগার পার। আকাশ জুড়ে তুফান চলে, বাতাস বহে দমকায়, গাছের পাতা শিহরি কাপে, বিজলী ঘন চমকায় মাভৈ রবে ডাকছি সবে খুজিছি ভাবের রাস্তা (এই) ভণ্ডগুলোর গণ্ডগোলে স্বপ্ন হল ভ্যাস্তা। প্রথম ভাবুক। যা হবার তা হয়ে গেছে—বলে গেছেন আর্য— গতস্য শোচনা নাস্তি বুদ্ধিমানের কার্য। দ্বিতীয় ভাবুক। কি আশ্চর্য, ভাবতে গায়ে কাটা দিচ্ছে মশায় এমনি করে মহাত্মারা পড়েন ভাবের দশায় । ভাবক দাদা। অন্তরে যার মজুত আছে ভাবের খোরাকি-- o (তার) ভাবের নাচন মরণ বাচন বুঝবি তোরা কি ? দ্বিতীয় ভাবুক। পরাবিদ্যা ভাবের নিদ্রা—আর কি প্রমাণ বাকি পায়ের ধূলো দাও তো দাদা মাথায় একটু মাখি । ভাবুক দাদা। সবুর কর স্থিরাভব, রাখ এমন টিপনী, ভাবের একটা ধাক্কা আসছে, সরে দাড়াও O এক্ষুনি । ∎ሞ ভাবের ধাক্কা প্রথম ভাবুক। বিনিদ্র চক্ষ মুখে নাহি অন্ন আক্কেল বুঝি জড়তাপন্ন । স্নানবিহীন যে চেহারা রুক্ষ— এত কি চিন্তা—এত কি দুঃখ ? দ্বিতীয় ডাবুক। সঘনে বহিছে নিশ্বাস তপ্ত— মগজে ছুটিছে উন্দাম রক্ত । দিন নাই রাত নাই—লিখে লিখে হাত ক্ষয় একেবারে পড়ে গেলে ভাবের পাতকোয় । ভাবুক দাদা। শৃঙ্খল টুটিয়া উন্মাদ চিত্ত আকুপাকু ছন্দে করিছে মৃত্য— নাচে ল্যাগব্যাগ তাণ্ডব তালে ঝলক জ্যোতি জুলিছে ভালে । জাগ্রত ভাবের শবদ পিপাসা শূন্যে শূন্যে খুজিছে ভাষা। সংহত ভাবের ঝংকার মাঝে বিদ্রোহ ডম্বর অনাহত বাজে । দ্বিতীয় ভাবুক । (হ্যা-হা) ঐ শোনো দুড়দাড় মার-মার, শব্দ দেবাসুর পশুনর ত্রিভুবন স্তবধ । প্রথম ভাবুক। বাজে শিঙা ডম্বরু শাখ জগঝম্প, ঘন মেঘ গর্জন, ঘোর ভূমিকম্প— । ভাবুক দাদা। কিসের তবে দিশেহারা ভাবের টেকি পাগল পারা আপনি নাচে নাচে রে । ছন্দে ওঠে ছন্দে নামে নিত্যধ্বনি চিত্ত ধামে গভীর সুরে বাজে রে । নাচে টেকি তালে তালে যুগে-যুগে কালে-কালে বিশ্ব নাচে সাথে রে । রক্ত-আঁখি নাচে টেকি, চিত্ত নাচে দেখাদেখি নৃত্যে মাতে মাতে রে । প্রথম ভাবুক । চিন্তা পরাহত বুদ্ধি বিওক্ষা মগজে পড়েছে ভীষণ ফোসকা । সরিষার ফুল যেন দেখি দুই চক্ষে । ডুবজলে হাবুডুবু কর দাদা রক্ষে । দ্বিতীয় ভাবুক । সূক্ষ নিগুঢ় নব টেকিতত্ত্ব, ভাবিয়া-ডাবিয়া নাহি পাই অর্থ । ভাবুক দাদা। অর্থ। অর্থ তো অনার্থর গোড়া । ভাবুকের ভাত-মারা সুখ-মোক্ষ-চোরা ; যত সব তালকানা আঘামারা আনাড়ে অর্থ-অর্থ করি খুঁজে মরে ভাগাড়ে। §o