পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেদিন ঐ ফকিরের গল্পটা বলতেই কি রকম হেসে উঠল— গল্পটা জমতেই দিল না। বিশ্বম্ভর। হ্যা, হ্যা ? ফকিরের স্বপ্নটা কি হয়েছিল। বেহারী। আ মোলো যা । মশাই, আমরা-আমরা কথা কইছি—আপনি মধ্যে থেকে আমন ধারা করছেন কেন । বিশ্বম্ভর । ও বাবা | এও দেখি ফোস করে । মশাই, আমার ঘাট হয়েছে—আপনাদের কথা আপনারা বলুন— আমার ও-সব গুনে-টুনে দরকার নেই— { বিশ্বস্তুরের সংগীত ] শুনতে পারি নে রে শোনা হবে না এসব কথা শুনলে তোদের লাগবে মনে ধাঁধা কেউ বা বুঝে পুরোপুরি কেউ বা বুঝে আধা । (কেউ বা বুঝে না ) কারে বা কই কিসের কথা, কই যে দফে-দফে গাছের পরে কাঠাল দেখে তেল মেখো না গোফে ( কাঠাল পাবে না ) একটি-একটি কথায় যেন সদ্য দাগে কামান মন বসনের ময়লা ধুতে তত্ত্ব কথাই সাবান (সাবান পাবে না ) বেশ বলেছ ঢের বলেছ এখেনে দাও দাড়ি হাটের মাঝে ভাঙবে কেন বিদ্যে-বোঝাই হাড়ি (হাড়ি ভাঙবে না ) বেহারী । আহা, রাগ করেন কেন মশাই । আমি স্বপ্ন দেখছি বৈ তো নয়—আর সে স্বপ্নও এমন কিছু নয়। আমি দেখলুম, একটা অন্ধকার গর্তের মধ্যে এক সন্নিসি বসে-বাস ঘড়-ঘড় করে নাক ডাকছে । বিশ্বস্তুর । বলেন কি মশাই ? তারপর } বিহারী। ব্যস্ ! তারপর আর কি ? সে নাক ডাকছে তো ডাকছেই! বিশ্বম্ভর । করবেন তো— পটলা । হ্যা-হা, ওটা চেপে গেলে চলবে না দাদা- ওটা বলতে হবে। দেখিস, তখন হারটার মুখ একেবারে দিস্ কাইণ্ড অভ সমল হয়ে যাবে— বিশ্বস্তর। হ্যা বুঝলেন, বেশ একটু রঙ-চণ্ড নিয়ে বলবেন । বেহারী। আ মোলো যা ! আমার স্বপ্ন আমার, যেমন ইচ্ছা তেমন করে বলব । গুরুজির শুভাগমন । যুগপৎ কথা বলিবার চেষ্টা হরেকানন্দ । একটা প্রশ্ন এই কদিন থেকে— বেহারী। সিদিন একটা স্বপ্ন দেখলুম— নাটক কি আশ্চর্য 1 আপনার গুরুজিকে জিগগেস হারকানন্দ ও বেহারীলালের হরেকানন্দ । তার জন্যে দুদিন ধরে আর সোয়াস্তি নেই— বেহারী । একটু নিরিবিলি যে জিগগেস করব তার তো জো নেই— হারকানন্দ । তাই জগাইকে আমি বলছিলুম— বেহারী। পটলা জানে আর এই ভদ্রলোকটি সাক্ষী আছেন— হরেকানন্দ । আঃ—কথা বলতে দাও না--- বেহারী । কেন ওরকম করছ বল দেখি । ওরুজি । এত গোলমাল কিসের । বেহারী। আজে, হরে বড় গোলমাল করছে - হরেকানন্দ । বিলক্ষণ । দেখলেন মশাই—- বেহারী। হয়েছে কি আমি একটা স্বপ্ন দেখছিলুম-— বিশ্বস্তর। হা-হ্যাঁ, আমরা সাক্ষী আছি । বেহারী। আমি স্বপ্ন দেখলুম, অমাবস্যার রাত্তিরে একটা অন্ধকার গর্তের মধ্যে ঢুকে আর বেরুবার পথ পাচ্ছিনে। ' ঘুরতে-ঘুরতে এক জায়গায় দেখি এক সন্নেসি– পটল । তার মাথায় ইয়া বড় জটা-- বিশ্বস্তর । তার গায়ে মাথায় ভঙ্গমমাখা --তার ওপর রক্তচন্দনের ছিটে— বেহারী। (স্বগত) কি আপদ স্বপ্ন দেখলুম আমি আর রঙ ফলাচ্ছেন ওরা —সমেসিকে খাতির-টাতির করে পথ জিগগেস করলুম--বললে বিশ্বেস করবেন না মশাই, সে কথার জবাবই দিলে না। বসে ঘড়ঘড়, ঘড়ঘড় করে নাকই ডাকছে, নাকই ডাকছে । পটলা । সে নাক ডাকানি এক অদ্ভুত ব্যাপার - নাক ডাকতে-ডাকতে সারে গামা পাধা নিসা...করে সুর খেলাচ্ছে। বিশ্বম্ভর। হ্যা-হ্যা, ঠিক বলেছ । আর সাতটে সুরের সঙ্গে রামধনুর সাতটে রঙ একবার ইদিক আসছে, একবার উদিকে যাচ্ছে । বেহারী । সুরের সঙ্গে রঙের সঙ্গে না মিশে দেখতে দেখতে দেখতে-দেখতে চারিদিক সব ফরসা হয়ে উঠল—আমি তো অবাক হয়ে হা করে রইলুম ! বিশ্বস্তুর । যে বলে এটা বাজে স্বপ্ন, সে নাস্তিক । গুরুজি ৷ অতি সুন্দর, অতি সুন্দর । একেবারে ভেতরকার প্রশ্নে এসে ঠেকেছে –এতদিন বলব-বলব করেও যে কথা বলা হয়নি, সেই কথার মূলে এসে ঘা দিয়েছ । বৎস হরেকানন্দ, তুমি স্বপ্নে যা দেখেছ, তা যথার্থই বটে। বেহারী। ও তো স্বপ্ন দেখেনি—আমি দেখেছিলুম-– পটলা । হা-ওরা তো দেখেনি আমরা দেখেছিলুম-- হরেকানন্দ । আমি তো এই বিষয়ই প্রশ্ন করব ভেবেছিলুম কিনা। ঐ যে ভেতরকার প্রশ্ন যেটা বলে-বলেও বলা হচ্ছে না, আমার প্রশ্নই হচ্ছে তাই। 80s!