পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ডেভিড লিভিংস্টোন

 স্কটল্যাণ্ডের এক গরিব তাঁতির ঘরে ১৮১৩ খৃস্টাব্দে ডেভিড লিভিংস্টোনের জন্ম হয়। খুব অল্প বয়স হতেই ডেভিড তার বাপের সঙ্গে কারখানায় কাজ করতে যেত সেখানে তাকে প্রতিদিন চৌদ্দ ঘণ্টা খাটতে হত। কিন্তু তার উৎসাহ এমন আশ্চর্য রকমের ছিল যে, এত পরিশ্রমের পরেও সে রাত্রে একটা গরিব স্কুলে পড়তে যেত। যখনই একটু অবসর হত সে তার বই নিয়ে পড়ত, নাহয় মাঠে-ঘাটে ঘুরে নানারকম পোকা-মাকড়, গাছ-পাথর প্রভৃতি সংগ্রহ করে বেড়াত।

 এমনি করে লিভিংস্টোনের বাল্যকাল কেটে গেল। তার পর উনিশ বৎসর বয়সে তার মাইনে বাড়াতে, বাড়ির অবস্থা একটু ভালো হল। তখন তিনি কারখানার মালিকের সঙ্গে এমন বন্দোবস্ত করে নিলেন, যাতে তিনি বছরে ছয়মাস কাজ করতেন আর বাকি দু’মাস সূগো শহরে গিয়ে পড়াশুনা করতেন। সেখানে কয়েক বছর ডাক্তারি পড়ে এবং ধর্মশিক্ষার পরীক্ষা পাশ করে, সাতাশ বৎসর বয়সে তিনি অসভ্য জাতিদের মধ্যে শিক্ষা ও ধর্ম প্রচারের জন্য চাকুরি নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় গেলেন। আফ্রিকায় তখনো সাহেবেরা বেশি যাতায়াত আরম্ভ করে নিম্যাপের অনেক স্থানই তখন অজানা দেশ বণে লেখা থাকত। সেই অজানা দেশে অচেনা লোকের মধ্যে লিভিংস্টোন বাস করতে গেলেন।

 পাদরি ডাক্তার লিভিংস্টোন দেখতে দেখতে আফ্রিকার নানা ভাষা শিখে ফেললেন, সেখানকার লোকেদের সঙ্গে মিশে তাদের সুখ-দুঃখের কথা সব জানলেন—আর দেশটাকে তার এত ভালো লাগল যে, তার সেবায় জীবনপাত করতে তিনি প্রস্তুত হলেন। দেশের লোকের বড় দুঃখ যে, দুষ্ট পর্তুগীজ আর আরব দস্যুরা তাদের ধরে নিয়ে দাস করে রাখে, ছাগল-গোরুর মতো হাটে-বাজারে তাদের বিক্রি করে। বেচারীরা হাতির দাঁত, পাখির পালক ও নানারকম জন্তুর চামড়ার ব্যবসা করে, বিলাতি জাহাজে করে সওদাগরেরা তাদের জিনিস কিনে নিয়ে যায়। কিন্তু মাঝপথে এই-সব দুষ্ট লোকেরা

জীবনী
৫৩