কশাই তার দাম চুকিয়ে দিয়ে, তার পর মুগুরের মতো একটা ডাণ্ডা দিয়ে লোলিকে গুঁতো মেরে বলল, “চল, দেখি। বড় তেজ দেখাচ্ছিস—না? আচ্ছা, কালকে আর বাছাধনকে তেজ দেখাতে হবে না। কাল রাজার জন্মতিথির ভোজ—কেল্লা থেকে হুকুম এসেছে চোদ্দটা শুওর পাঠাতে হবে। এইটাকেই সবার আগে চালান দিচ্ছি। তা হলে ভোজটিও হবে ভালো।”
লোলি ঘঁৎ ঘৎ করে অনেক আপত্তি জানাতে লাগল, আর মনে মনে ভাবল, ‘যেই ফটক খুলবে অমনি দৌড়ে পালাব।’ যেমন ভাবা তেমনি কাজ; লোলির বাবা কশাইয়ের সঙ্গে এগিয়ে এসে যেমন ফটকটা খুলে ফাঁক করে ধরেছেন, অমনি লোলিও হন্হন্ করে দৌড় দিয়েছে। কিন্তু দৌড়ে যাবে কোথায়? বেরিয়েই দেখে কশাইয়ের দুটো ষণ্ডা কুকুর দাঁত বের করে বসে আছে। কাজেই তার আর পালান হল না। যাবার সময় লোলি শনল, তার বাবা বকাবকি করছেন, “মনে করেছিলাম, ছোঁড়াটাকে আজ একটু তামাশা দেখাতে নিয়ে যাব, কিন্তু হতভাগা কোথায় যে গেল!”
কশাই লোলিকে ঠেলে ঠেলে তার বাসায় নিয়ে ছোট্ট নোংরা একটা খোঁয়াড়ের মধ্যে পুরে নিজের কাজে চলে গেল, আর লোলি কাদার মধ্যে পড়ে কাঁদতে লাগল। খানিক বাদে যমের মতো চেহারা দটো লোক এল তাদের একজনের হাতে দড়ি, আর একজনের হাতে মস্ত একটা ছুরি। তারা এসেই লোলিকে দেখে বলল, “হাঁ হাঁ, এইটা তো বেশ মোটা আছে—বাঃ ধর দেখি!” এই বলে তারা লোলিকে মাটিতে ফেলে চেপে ধরল। লোলি তখন “মেরো না, মেরো না—আমি সত্যিকারের শুওর নই”—বলে প্রাণপণে চেঁচিয়ে উঠল।
ঠিক সেই সময়ে লোলির কানের কাছে কে যেন “হো-হো” করে হেসে উঠল, আর লোলি ধড়ফড়্ করে লাফিয়ে উঠে দেখল, সে তখনও সেই খড়ের গাদার ওপরেই রয়েছে—আর তার বাবা তার সামনে দাঁড়িয়ে হো হো করে হাসছেন, আর বলছেন, “স্বপ্নে বুঝি শুওর হবার সখ হয়েছিল? আচ্ছা হতভাগা ছেলে যা হোক!” লোলি কতক্ষণ বোকার মতো ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল, তারপর চোখ রগড়ে আবার চারদিকে চেয়ে দেখল, তারপর বলল, “আমাদের শুওরটা?” তার বাবা বললেন, “ঐ তো! শুনছিস নে? ঐ শোন্।” লোলি শুনল শুওরটা দিব্যি আরামে ঘঁৎ ঘঁৎ করে ডাকছে।
তখন লোলি বলল, “ভাগ্যিস্ পালায় নি!” তার বাবা বললেন, “তোমার মতো গুণধর ছেলেকে পাহারার ভার দিয়েছি, শুওর যে পালায় নি এ তো আমার আশ্চর্য ভাগ্য বলতে হবে।” লোলি বলল, “এখন থেকে খুব ভালো করে পাহারা দেব, আর কক্ষনো ফাঁকি দিয়ে ঘুমোব না।”