বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

তিন বন্ধু

 এক ছিলেন রাজা—তাঁর ছিল এক ছেলে। রাজামশাই বড্ড বুড়ো হয়েছেন; তাই তিনি তাঁর ছেলেকে ডেকে বললেন, “দেখ বাবা, আমি তো বুড়ো হয়েছি, কাজকর্ম আর ভালো ক’রে দেখতে পারি না। এখন তুমি আমার কাজকর্ম বুঝে নেও, আর একটি সন্দের লক্ষ্মী বৌ নিয়ে এসো।” এই বলে তিনি একটা সোনার চাবি রাজপুত্রের হাতে দিলেন, আর বললেন, “রাজবাড়ির ছাতের দক্ষিণ কোনার ঘরটিকে এই চাবি দিয়ে খুলে, তার ভেতরে গিয়ে যে সুন্দরী রাজকন্যাদের ছবি দেখবে, তাদের মধ্যে থেকে একটিকে পছন্দ করে আমায় এসে বলবে।” রাজপুত্র তখনই সেই ঘরটিতে গেলেন। সেখানে গিয়ে তিনি একেবারে হাঁ করে রইলেন! ঘরটি গোল আর তার ছাত ঠিক আকাশের মতো নীল; তার ওপর সোনারুপোর তারা ঝলমল করছে। ঘরের চারিদিকে সোনা দিয়ে বাঁধানো বারোটি জানালা; তার প্রত্যেকটির ওপর চমৎকার পোশাকপরা একটি সুন্দরী রাজকন্যার ছবি আঁকা। তার মধ্যে কে যে বেশি সুন্দরী তাই সে আর ঠিক করতে পারছে না। এমন সময় সে দেখলো যে একটি জানালা পর্দা দিয়ে ঢাকা। তাড়াতাড়ি সে পর্দা উঠিয়ে দেখে কি—একটি অতি সুন্দরী রাজকন্যার ছবি। তার পোশাক কিন্তু একেবারে সাদাসিধে আর মাথায় মুক্তার মুকুট। বেচারার কিন্তু বড় বিষণ্ণ চেহারা; যেন তার কত দুঃখ।

 সেই রাজকন্যাকেই সে পছন্দ করলো, আর দেখতে দেখতে অন্য সব ছবি কোথায় মিলিয়ে গেল। রাজপুত্র বড়ই আশ্চর্য হয়ে, তখনই তার বাবাকে সব কথা জানাল। রাজামশাই তো সব শুনে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন—“সর্বনাশ! এই রাজকন্যাকে যে দুষ্ট জাদুকরে লোহার বাড়িতে আটক করে রেখেছে; যে একে ছাড়াতে যায় সেই যে আর ফেরে না। তোমার কপালে সে কত দুঃখ আছে তা আর কি বলব। এখন তো আর কোন উপায় নেই। পছন্দ যখন করেছ তখন তার খোঁজে যাও।”

 তখনই রাজপুত্র একটা খুব তেজি ঘোড়া নিয়ে রওয়ানা হয়ে পড়লো। অনেক দূর গিয়েছে সে, এমন সময় শুনতে পেল, কে যেন বলছে—“আরে, থামো না! থামো না!” রাজপুত্র অমনি পেছন ফিরে দেখলো যে, এয়া লম্বা একটা লোক তাকে বলছে, “ওহে আমাকে তোমার সঙ্গে নেও, দেখবে তোমার কত কাজ করে দিতে পারি আমি।” রাজপুত্র বলল, “তোমার নাম কি? আর তুমি করতেই-বা পার কি?” সে বলল, “আমার নাম ঢ্যাঙারাম। আমি যত ইচ্ছা লম্বা হতে পারি। ঐ যে তালগাছের আগায় বাবুইয়ের বাসা দেখছ, ওটিকে আমি এখনই পেড়ে দিতে পারি; তাতে আমার গাছে চড়বারও দরকার হবে না।” এই বলে সে দেখতে দেখতে তালগাছের মতো লম্বা হয়ে গেল আর পাখির বাসাটি পেড়ে নিয়েই চট করে আবার বেঁটে হয়ে গেল। রাজপুত্র বলল, “তা তো দেখলাম, কিন্তু ওতে আমার কি সাহায্য হবে? এই বনটা পার হবার রাশটা যদি বলতে পার তবে বুঝবো আমার সাহায্য করলে।” ঢ্যাঙারাম আবার লম্বা হতে লাগলো আর দেখতে দেখতে তালগাছ ছাড়িয়ে কোথায় তার মাথা উঠলো। তারপর চারদিকে তাকিয়ে দেখে বলল, “ঐ যে রাস্তা দেখা

১১৪
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী