পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আছে; সেইটিই হলো রাজকন্যা। ঢ্যাঙারাম যদি আমায় নিয়ে যায় তবে এখনি আমি রাজকন্যাকে আনব।”

 যেমন কথা তেমনি কাজ। ঢ্যাঙারাম তখনই আগুনচোখকে কাঁধে নিয়ে কুড়ি মাইল লম্বা একেক পা ফেলে মুহূর্তের মধ্যে সেখানে হাজির হলো। আগুনচোখ সেই পাহাড়ের দিকে কটমট করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সেই পাহাড়টাকে ফাটিয়ে গুঁড়িয়ে দিল, আর তার ভেতর থেকে সেই পাথরটা বেরিয়ে পড়ল। সেটাকে নিয়ে রাজপুত্রের কাছে দিতেই রাজপুত্র পাথরটা মাটিতে ফেলে দিল, আর রাজকন্যা এসে হাজির হলো!

 সেদিন বুড়ো এসে রাজকন্যাকে দেখে যা চটে গেল, কি আর বলব! দুইহাতে মাথার চুল ছিঁড়তে ছিঁড়তে সে বলল, “আজ রাত্রে দেখব তোর বেশি ক্ষমতা না আমার বেশি ক্ষমতা! হয় তুই মরবি নাহয় আমি মরব।”

 সে রাত্রেও রাজপুত্র আর তিন বন্ধু রাজকন্যাকে পাহারা দিতে লাগল, কিন্তু সেদিনও দুপুর রাতের আগেই সকলে ঘুমিয়ে পড়ল, আর রাজকন্যাও কোথায় জানি হারিয়ে গেল। ভোরের বেলা রাজপুত্র জেগে যেই দেখলো রাজকন্যা নেই, অমনি সে আগুনচোখকে ঠেলা দিয়ে জাগিয়ে দিয়ে বলল, “শিগ্‌গির দেখ, রাজকন্যা কোথায় গেল!”

 আগুনচোখ কিছুক্ষণ চারদিকে তাকিয়ে তারপর বলল, “এবার তাকে দেখেছি! ঐ যে তিনশো মাইল দূরে কালো জলের সাগর আছে, তার মাঝখানে, জলের তলায় একটা শামুক আছে, সেই শামুকের মধ্যে একটা আংটি আছে, সেটিই রাজকন্যা। এখনও চেষ্টা করলে আমি আর ভোঁদারাম ঢ্যাঙারামের ঘাড়ে চড়ে সেখানে গিয়ে রাজকন্যাকে উদ্ধার করে আনতে পারি।”

 এ কথা বলামাত্র ঢ্যাঙারাম, আগুনচোখ আর ভোঁদারামকে কাঁধে নিয়ে, ত্রিশ মাইল লম্বা একেক পা ফেলে, মুহূর্তের মধ্যে গিয়ে সেখানে হাজির হল। তারপর ভোঁদারাম নিজের শরীরটি ফুলিয়ে পাহাড়ের চেয়ে বড় করে, চোঁ চোঁ শব্দে সাগরের জল খেতে আরম্ভ করল। দেখতে দেখতে জল এত কম হয়ে গেল যে ঢ্যাঙারাম অনায়াসে শামুকটা তুলে এনে তার ভেতর থেকে আংটিটি বার করে নিল।

 এদিকে রাজপুত্র তো বড়ই অস্থির হয়ে পড়ল। সকাল হয়ে গেল, তবু তিন বন্ধু ফেরেই না। এমন সময় সেই বুড়ো হাসতে হাসতে দরজা খুলে ঘরে ঢুকলো, কিন্তু কোনো কথা বলার আগেই ঠন করে জানলার কাঁচ ভেঙে সেই আংটিটা এসে ঘরে পড়ল, আর রাজকন্যা উঠে দাঁড়ালো। আগুনচোখ সেই তিনশো মাইল দূর থেকে সব দেখতে পেয়েছিল আর তাই সে ঢ্যাঙারামকে আংটিটা ছুঁড়ে দেবার কথা বলেছিল। ঢ্যাঙারামও প্রকাণ্ড লম্বা হাত বার করে আংটিটাকে সাঁই করে ছুঁড়ে ঠিক ঘরের ভেতরেই ফেলে দিল, আর রাজপুত্রও বেঁচে গেল।

 বুড়ো বেচারার যা তখন দুরবস্থা! তার চোখ কপালে উঠে গেছে, দাঁতে দাঁতে লেগে গেছে। আর থরথর করে কাঁপছে। কিছুক্ষণ পরে সে ধোঁয়া হয়ে গেল, আর একটা দাঁড়কাক সেই ধোঁয়া থেকে বেরিয়ে ‘কা-কা’ করতে করতে উড়ে চলে গেল। সে বাড়ির যত লোকজন পাথর হয়ে ছিল তারাও তখন বেঁচে উঠে রাজপুত্রের কাছে এসে হাত জোড় করে দাঁড়াল।

 তারপর সকলকে নিয়ে রাজপুত্র খুব ধুমধাম করে বাড়ি ফিরে এলো। সেখানে

দেশ-বিদেশের গল্প
১১৭