বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চারজনের জন্য নানারকম সুন্দর খাবার সাজানো রয়েছে দেখে তারা পেট ভরে খেয়ে নিলো। তারপর তারা শোবার জোগাড় দেখবে বলে উঠতে যাচ্ছে—এমন সময় হঠাৎ দরজা খুলে গেল আর একটা বুড়ো, কুঁজো, বিদঘুটে, এয়া লম্বা, পাকা দাড়িওয়ালা লোক একটি অতি সুন্দর রাজকন্যার হাত ধরে ঘরে ঢুকলো। রাজপুত্রকে দেখেই বুড়ো লোকটা বলল, “বাপুহে, সব জানি আমি! রাজকন্যাকে তো নিতে চাচ্ছ, কিন্তু তিনটি রাত যদি তাকে রক্ষা করতে পারো—তার আগে যদি সে হারিয়ে না যায়—তবেই তাকে পাবে; নইলে এই এতগুলি লোকের মতো তুমিও পাথর হয়ে যাবে।” এই বলে সে রাজকন্যাকে একটা চৌকিতে বসিয়ে দিয়ে চলে গেল।

 রাজপুত্র তো মেয়েটিকে দেখে বড় খুশি। সে তাকে কত কথা জিজ্ঞাসা করে, কিন্তু মেয়েটি কিছুই বলে না—হাসেও না। তারপর যখন রাত বেশি হয়ে এলো তখন ঢ্যাঙারাম লম্বা হয়ে ঘরের চারদিকে ঘিরে রইল; ভোঁদারাম এয়া মোটা হয়ে ফুলে তার পেট দিয়ে দরজার ছেঁদা বন্ধ করে রইল, যাতে একটি ইঁদুরও না ঢুকতে বা পালাতে পারে; আর আগুনচোখ চারদিকে খুব হুঁশিয়ার হয়ে তদ্বির করতে লাগল।

 কিন্তু সকলেই বড় ক্লান্ত হয়েছিল; তাই কিছুক্ষণ পরে সকলেই খুব নাক ডাকিয়ে ঘুমোতে লাগল। ভোরের বেলা রাজপুত্রেরই আগে ঘুম ভেঙে গেল, আর সে দেখল যে রাজকন্যা ঘরে নাই। তখন যে তার দুঃখটা হলো! সে তাড়াতাড়ি আর তিনজনকে জাগিয়ে দিল, আর তখন কি করতে হবে জিজ্ঞাসা করল।

 আগুনচোখ বলল, “ভয় কিসের? ঐ যে আমি তাকে দেখতে পাচ্ছি। এখান থেকে একশো মাইল দুরে একটা বন আছে। সেই বনে একটা আমগাছ আছে; তাতে একটি আম ফলেছে; তারই আঁঠিটি হচ্ছে সেই রাজকন্যা। ঢ্যাঙারাম আমাকে কাঁধে নিয়ে চলুক, আমরা এখনই তাকে আনছি।”

 অমনি ঢ্যাঙারাম আর কথাবার্তা না বলে আগুনচোখকে কাঁধে তুলে নিল, আর দশ মাইল লম্বা একেক পা ফেলে ফেলে মুহূর্তের মধ্যে সেখানে উপস্থিত হল। তারপর আমের আঁঠি আনতে আর কতক্ষণ লাগে!

 সেই আঁঠিটি রাজপত্রের হাতে দিয়ে আগুনচোখ বলল, “এটাকে মাটিতে ছুঁড়ে মারো।” আর রাজপুত্রও কথামত কাজ করামাত্র রাজকন্যা এসে হাজির!

 সূর্য উঠবার একটু পরেই সেই বুড়ো হাসতে হাসতে এসে, দড়াম করে দরজা খুলে ঘরে ঢুকলো; কিন্তু সেখানে রাজকন্যাকে দেখে বেচারা এমন চমকে গেল যে আরেকটু হলেই সে পড়ে যেত। তারপর রাগে গজগজ করতে করতে সে রাজকন্যাকে নিয়ে চলে গেল।

 সেদিন সন্ধ্যায় আবার বুড়ো এসে রাজকন্যাকে রেখে গেল। রাজপুত্র আর তিন বন্ধু সে রাত্রে জেগে থাকবার জন্য খুবই চেষ্টা করেছিল, কিন্তু দুপুর রাত্রের আগেই সকলে ঘুমিয়ে নাক ডাকাতে আরম্ভ করল। ভোরের বেলা রাজপুত্র আগে জেগে যেই দেখলো রাজকন্যা নেই,অমনি অস্থির হয়ে তাড়াতাড়ি তিনবন্ধুকে জাগিয়ে দিয়ে বলল, “আগুনচোখ! শিগ্‌গির দেখ রাজকন্যা কোথায় গেল। সকাল যে হয়ে এল!”

 আগুনচোখ জেগে উঠে চোখ রগড়ে বলল, “এই যে আমি তাকে দেখছি। এখান থেকে দুইশো মাইল দূরে একটা পাহাড় আছে; সেই পাহাড়ের মধ্যিখানে একটা পাথর

১১৬
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী