পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 অভিনয়ের জন্য এঁরা যে-সব গোঁফদাড়ি কিনতেন, তার মধ্যে থেকে একটা চাপদাড়ি লাগিয়ে চোগাচাপকান আর কালো চশমা পরে গণৎকার সেজে হঠাৎ-লম্বা-হয়ে-যাওয়া সুকুমার বন্ধুবান্ধবদের ঠকাতে লাগলেন এবং একবার এক ঠকে যাওয়া বন্ধুর সঙ্গে তাঁর মাকে পর্যন্ত ঠকিয়ে ফেললেন। মজাটা ভালোই জমেছিল, কিন্তু বন্ধুর মা যখন ভক্তির উচ্ছ্বাসে নবীন গণৎকারের পায়ে একটা প্রণাম ঠুকে দিলেন তখনই হলো অপ্রস্তুতের ব্যাপার।

 ছেলেদের স্কুলে (সিটি কুল) ভর্তি হয়ে সুকুমার সহজেই সহপাঠী ও বন্ধুবান্ধবদের নেতা হয়ে উঠলেন; কেবল সমবয়সীরা নয়, অনেক সময়ে বড়রাও তাঁর কথা শুনতেন।

 সিটি স্কুলের একজন পিউরিটান-গোছের মাস্টার মশাই ‘বায়োস্কোপ’ দেখার ঘোর বিরোধী ছিলেন। সুকুমার তাঁকে অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ‘লে মিজেরাব্লে’ ছবিটা দেখিয়ে এনে স্বীকার করিয়েছিলেন যে সিনেমা মাত্রেই অনিষ্টকর কিছু একটা নয়, যা দেখলে চরিত্রের উন্নতি হতে পারে এমন ফিল্মও আছে।

 আরেকবার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়কে একটা জিওনো মাগুরমাছকে অত্যন্ত নৃশংসভাবে একটা ছোট টিনে ভর্তি করতে দেখে দৃঢ় প্রতিবাদে নিরস্ত করেছিলেন।

 ছাত্রদের জন্য প্রকাশিত এক পত্রিকায় শিক্ষিত মেয়েদের বিষয়ে অভদ্র কুৎসামূলক একটা চিঠি প্রকাশিত হওয়ায় সকুমার তখনই তার লেখকের কাছে গিয়ে কঠিন আপত্তি করে তাঁকে তাঁর সমস্ত কথা প্রত্যাহার করে, ক্ষমা চেয়ে আরেকটা চিঠি লিখতে বাধ্য করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে, তাঁর দাদামশাই দ্বারকানাথ গাংগুলি অনুরূপ একটা ঘটনায় এক পত্রিকার সম্পাদককে তাঁর কাগজে প্রকাশিত শিক্ষিতা মেয়েদের কুৎসামূলক রচনার অংশটা গিলিয়েছিলেন।

 কর্মজীবনের দ্বারে: ১৩ নম্বর কর্ণওয়ালিস স্ট্রিটের পর কিছুদিন ৩৮ নম্বর শিবনারায়ণ দাস লেনে কাটিয়ে ১৯০০ সালে ২২ নম্বর সুকিয়া স্ট্রিটে এসে এঁরা বাসা বাঁধলেন।

 ১৩ নম্বরের গবেষণার ঘরের কাজ ক্রমেই বেড়ে উঠছিল, আর সঙ্গে সঙ্গে তখনকার দিশি ছাপাখানার নিকৃষ্টমানের কাজ নিয়ে অসন্তোষ গভীর হচ্ছিল। উপেন্দ্রকিশোর নিজের ছাপাখানা করবার জন্য জিনিসপত্রের অর্ডার দিয়ে ৩৮ নম্বরের অপেক্ষাকৃত বড় বাড়িতে উঠে গেলেন। উপেন্দ্রকিশোর নিজের চেষ্টায় হাফটোন ছবি ছাপার প্রণালী আয়ত্ত করেছিলেন আর কয়েকটি লোককে শিখিয়ে তৈরি করে নিয়ে আমাদের দেশে উচ্চশ্রেণীর ছবি ছাপবার জন্য ভালো আয়োজন করলেন।

 অল্পদিনের মধ্যেই আবার এখানেও কুলোলো না, তখন তাঁরা ২২ নম্বরের আরো বড় বাড়িটাতে উঠে গেলেন। সেখানে নীচে ছাপাখানা বসলো আর তিনতলার ওপরে কাঁচের ছাতওয়ালা স্টুডিও তৈরি হল। মেঘলা দিনে অথবা রাতে কাজের জন্য “আর্কল্যাম্প” আর নতুন ক্যামেরা, প্রেস আর আরো অনেক যন্ত্রপাতি এলো।

 দেখতে দেখতে ‘ইউ. রায় এণ্ড সন্সে’র কারবার ভারতে সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান বলে বিখ্যাত হল। উপেন্দ্রকিশোর গবেষণা করে হাফটোন ছবি সম্বন্ধে নতুন তথ্য আবিষ্কার করলেন এবং বিদেশে প্রকাশিত হলে প্রচুর যশ পেলেন।

সু.স.র-২