পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 বুড়ি বলল, “তোমার যেমন কথা!” বুড়ো বলল, “হাঁ! এরকম নাকি সত্যি সত্যি দেখা গেছে।” এই বলে বুড়ো আবার কাজে বেরুল।

 আধঘণ্টা না যেতে যেতেই বুড়ো আবার ফিরে এসে ভারি ব্যস্ত হয়ে বাড়িকে সেই টাকা পাওয়ার কথা বলল। তখন বুড়ো বুড়ি মিলে টাকা আনতে চলল। পথে যেতে যেতে বুড়ো সেই গাছতলায় এসে বলল, “গাছের উপর চকচক করছে ওটা কি?” এই বলে সে একটা ঢিল ছুঁড়তেই মাছটা পড়ে গেল। বুড়ি তো অবাক! তখন বুড়ো বলল, “নদীতে জাল ফেলেছিলাম, মাছ-টাছ পড়ল কিনা দেখে আসি।” জাল টানতেই—ওমা! খরগোস যে! তখন বুড়ো বলল, “কেমন! গণকঠাকুরের কথা আর অবিশ্বাস করবে?” তারপর টাকা নিয়ে তারা বাড়ি এল।

 টাকা পেয়েই বুড়ি বলল,”ঘর করব, বাড়ি করব, গহনা বানাব, পোশাক কিনব।” বুড়ো বলল, “ব্যস্ত হ’য়ো না—কিছু দিন রয়ে সয়ে দেখ—ক্রমে সবই হবে। হঠাৎ অত কাড করলে লোকে সন্দেহ করবে যে।” কিন্তু বুড়ির তাতে মন উঠে না—সে একে বলে, ওকে বলে; শেষে একেবারে কোটালের কাছে নালিশ করে দিল। কোটালের হুকুমে বুড়োকে হাতকড়া দিয়ে হাজির করা হল।

 বুড়ো সব কথা শুনে বলল, “সে কি হুজুর! আমার স্ত্রীর কি মাথার কিছু ঠিক আছে? সে তো ওরকম আবোল তাবোল কত কি বলে।” কোটাল তখন তেড়ে উঠলেন—“বটে! তুমি টাকা পেয়ে লুকিয়ে রেখেছ—আবার বুড়ির নামে দোষ দিচ্ছ?” বুড়ো বলল, “কিসের টাকা? কবে পেলাম? কোথায় পেলাম? আমি তো কিছুই জানি না।”

 বুড়ি বলল, “না তুমি কিছুই জান না? সেই যেদিন গাছের ডালে মাছ বসেছিল, নদীতে জাল ফেলে খরগোস ধরলে—সেদিনের কথা তোমার মনে নেই? কচি খোকা আর কি?”

 তাই শুনে সবাই হাসতে লাগল; কোটাল এক ধমক দিয়ে বুড়িকে বলল—“যা পাগলি, বাড়ি যা! ফের যদি এ-সব যা-তা বলবি তোকে আমি কয়েদ ক’রে রাখব।”

 বুড়ি তখন বাড়ি ফিরে গেল। কোটালের ভয়ে সে আর কারু কাছে টাকার কথা বলত না।

সন্দেশ—১৩২২


সূদন ওঝা

 সূদন ছিল ভারি গরিব, তার এক মুঠো অন্নেরও সংস্থান নাই। রোজ জুয়া খেলে লোককে ঠকিয়ে যা পায়, তাই দিয়ে কোনরকমে তার চলে যায়। যেদিন যা উপায় করে, সেইদিনই তা খরচ করে ফেলে, একটি পয়সাও হাতে রাখে না। এইরকমে কয়েক বছর কেটে গেল; ক্রমে সূদনের জ্বালায় গ্রামের লোক অস্থির হয়ে পড়ল, পথে তাকে দেখলেই সকলে ছুটে গিয়ে ঘরে দরজা দেয়; সে এমন পাকা খেলোয়াড় যে কেউ তার সঙ্গে বাজি রেখে খেলতে চায় না।

১৪০
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী