পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/২২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
রাখলে না, তাই না দেখে, “আই গো আপ —গোর কেবলি কান্দিতেছে—
ঘটিরাম। (বিকট হাস্য)
পণ্ডিত। ঘটে!
ঘটিরাম। অ্যা—না, আজে—
পন্ডিত। ফের ওরকম বিটকেল শব্দ করবি তো পিটিয়ে সিধে করে দেব।

পণ্ডিতের নিদ্ৰাচেষ্টা

কোটা। পণ্ডিতমশাই, ও পন্ডিতমশাই—
ঘটিরাম। ঘমেনুচ্ছে ? (ঠেলিয়া) ও পণ্ডিত মশাই! কেটা ডাকছে, কেটা ডাকছে—
কেষ্টা। পণ্ডিতমশাই, এই জায়গাটা বুঝতে পাচ্ছি না।

পণ্ডিত। হ:, দেখি নিয়ে আয়, কোন জায়গাটা। সব বলে দিতে হবে! তোদের আর কিচ্ছ হবে না! ওয়ানস আই মেট এ লেম ম্যান ইন এ সীট নিয়ার মাই হাউস'। 'ওয়ানস আই মেট এ লেম, ম্যান –কিনা একদা এক বাঘের গলায় হাড় ফটিয়াছিল। ইন এ সীট —সে বিস্তর চেণ্টা করিল। নিয়ার মাই হাউস’ —কিন্তু সে হাড় বাহির হইল না। এই সোজা ইয়েটা বুঝতে পাললি না ? (ঘটিরামের প্রতি) কি রে? পালাচ্ছিস যে !

ঘটিরাম। না, পালাচ্ছি না তো! কেটা এমনি গোলমাল কচ্ছে, কিচ্ছ অকি কষতে পাচ্ছি না।
পণ্ডিত। কি অাঁক দেখি নিয়ে আয়।
ঘটিরাম। আজ্ঞে এই যে! এই—চার সের আলুর দাম যদি দশ আনা হয় তবে আধ মণ পটলের দাম কত?
পণ্ডিত। দেখি, চার সের আলু দশ আনা তো! তবে আধ মণ পটল—আহা, আবার পটল এল কোথেকে?
ঘটিরাম। তা তো জানি না। বোধ হয় পটলডাঙা থেকে!
পণ্ডিত। দূৎ! একি একটা অকি হতে পারে? গাধা কোথাকার!
ঘটিরাম –তাই বলন! আমি কত যোগ করলাম, ভাগ করলাম, শেষটায় জি-সি-এম পৰ্যন্ত করলাম, কিছুতেই হচ্ছিল না। বন্ড শক্ত, না ?
পণ্ডিত। মেলা বকিস নে, যাঃ !
ঘটিরাম। যাবো? ছুটি?
কেষ্টা। ছুটি—ছুটি—ছুটি—
পণ্ডিত। না, না, ছুটি-টুটি হবে না।
ঘটিরাম। হ্যাঁ ভাই, তুই সাক্ষী আছিস, বলেছেন যা!
কেষ্টা। হ্যাঁরে, আমাদের কিন্তু কোন দোষ নেই।
পণ্ডিত। দেখলে কাণ্ডটা! এই-সব হাজকেই তো ছেলেগুলোকে মাটি করলে! আর জমিদারমশাইয়ের আক্কেলটা দেখ–এখানে এসে অবধি দশভূতে তাকে পেয়ে বসেছে— দেখ দেখি, টাকা ওড়াবার জন্য শেষটায় কিনা গানের মজলিস ছ্যা ছ্যা!
[ পণ্ডিতের প্রস্থান

জুড়ির প্রবেশ ও গান

সাবধান হয়ে সবে অবধান কর রে।
ওহে শিষ্য গুণধর কোলাহল ছাড় রে॥
(আহা) কেনা জানে চণ্ডীবাব ঝিঙেটোলার জমিদার।
(আহা) অন্যরক্ত ভক্ত মোরা চরণে প্রণমি তার॥
(ওসে) বিক্রমে বিক্ৰমাদিত্য সবশাস্ত্রে ধরন্ধর।
(আহা) সাক্ষাৎ যেন দাতাকণ দানব্রতে ভয়ঙ্কর॥
(এরা) খাচ্ছে দাচ্ছে ফতি কচ্ছে নিত্য তার কল্যাণে।
(সেথা) চব্বিশ ঘণ্টা মারছে আভা বখশিশাদি সন্ধানে॥
(সেথা) নিত্য নতুন হচ্ছে হললা লোকারণ্য মারাত্মক।
(সেথা) বাদ্যের ঘটা খাদ্যের ঘটা অর্থের শ্রান্ধ অনর্থক॥

নাটক
২২৩