পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 দুটো নিয়ে এক দৌড়ে গিয়ে নদীর মধ্যে ফেলে দিল। তারপর ফিরে এসে যেই তারা সেই ভুষুণ্ডির শেখানো কথাগুলো বলেছে, অমনি লালপুরী আর শ্বেতপুরী লাফিয়ে উঠে বলল, “আরে এ কি! তোমরা কোত্থেকে এলে? বনের মধ্যে আসলে কি করে? এত রোগা হয়ে গেছ কেন? তোমাদের সঙ্গে লোকজন কোথায়? আমাদের খবর পেলে কার কাছে?” তারা একে একে সব কথা বলল। তারপর তারা চারজনে মনের আনন্দে হাসতে হাসতে, কাঁদতে কাঁদতে পুরীতে ফিরে চলল।

 তারপর কি হল? তারপর সবাই পুরীতে ফিরে এলো, আমোদ-আহ্লাদ, ভোজ, উৎসব লেগে গেল। তারপর? তারপর একদিন লালপুরীর রাজকন্যার সঙ্গে শ্বেতপরীর রাজপুত্রের ধুমধাম করে বিয়ে হল—বনের দেবী চন্দ্রাবতী নিজে এলেন বিয়ে দেখতে। আর হতভাগা তদবির সিং-এর কি হল? তাকে অন্ধবনে পাঠিয়ে দেওয়া হল—আজও সেখানে সে তার গিন্নির সঙ্গে কেবল মাটি খুঁড়ছে আর বীজ পুঁতছে, আর বনে-জঙ্গলে বীজ খুঁজে বেড়াচ্ছে।

সন্দেশ—১৩২৮



দেবতার দুর্বুদ্ধি


 স্বর্গের দেবতারা যেখানে থাকেন, সেখান থেকে পৃথিবীতে নেমে আসবার একটিমাত্র পথ; সে পথ রামধনুকের তৈরী। জলের রঙে আগুন আর বাতাসের রঙ মিশিয়ে দেবতারা সে পথ বানিয়েছেন। আশ্চর্য সুন্দর সেই পথ, স্বর্গের দরজা থেকে নামতে নামতে পৃথিবী ফুঁড়ে পাতাল ফুঁড়ে কোন অন্ধকার ঝরনার নীচে মিলিয়ে গেছে। কোথাও তার শেষ নেই।

 পথটি পেয়ে দেবতাদের আনন্দও হল, ভয়ও হল। ভয় হল এই ভেবে যে, ঐ পথ বেয়ে দুর্দান্ত দানবগুলো যদি স্বর্গে এসে পড়ে! দেবতারা সব ভাবনায় বসেছেন, এমন সময় চারদিক ঝলমলিয়ে, আলোর মত পোশাক পরে, হিমদল এসে হাজির হলেন। হিমদল কে? হিমদল হলেন আদি দেবতা অদিনের ছেলে। তাঁর মায়েরা নয়টি বোন, সাগরের মেয়ে। তাঁদের কাছে পৃথিবীর বল, সমুদ্রের মধু, আর সূর্যের তেজ খেয়ে তিনি মানুষ হয়েছেন। তাঁকে দেখেই দেবতারা সব ব’লে উঠলেন, “এসো হিমদল, এসো মহাবীর, আমাদের রামধনুকের প্রহরী হয়ে স্বর্গদ্বারের রক্ষক হও।”

 সেই অবধিই হিমদলের আর অন্য কাজ নেই, তিনি যুগ-যুগান্তর রাত্রিদিন স্বর্গদ্বারে প্রহর জাগেন। ঘুম নেই, বিশ্রাম নেই, একটিবার পলক ফেললেই বহুদিনের সমস্ত শ্রান্তি জুড়িয়ে যায়। রামধনুকের ছায়ার নীচে সারারাত শিশির ঝরে, তার একটি কণাও হিমদলের চোখ এড়ায় না। পাহাড়ের গায়ে গায়ে সবুজ কচি ঘাস গজায়, হিমদল কান পেতে তার আওয়াজ শোনেন। ফাঁকি দিয়ে স্বর্গে ঢুকবে এমন কারও

দেশ-বিদেশের গল্প
৭৯