পাতা:স্বদেশ ও সাহিত্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বদেশ ধারাই যদি আমরা গ্রহণ করে থাকি, তা হ’লে নিশ্চয়ই বলছি আমি, কেবল মাত্র সমস্বরে ও প্রবল কণ্ঠে বন্দেমাতরম্ ও মহাত্মার জয়ধ্বনিতে গল চিরে আমাদের রক্তই বা’র হবে, পরাধীনতার জগদল শিলা তাতে স্বচ্যগ্র ভূমি ও নড়ে বসবে না । একটুখানি অবিনয়ের অপবাদ নিয়েও বলতে হচ্ছে, বুড়ে হ'লেও চিরদিনের অভ্যাসে এ চোখের দৃষ্টি আমার আজও একেবারে বাপ স৷ হ’য়ে যায়নি। যা’ যা দেখছি, ( অন্ততঃ এই হাবড় জেলায় য’ দেখেছি ) তা’ নিছক এই ভিক্ষার চাওয়া, দাম না দিয়ে চাওর, ফাকি দিয়ে চাওয়া । মানুষের কাজ-কৰ্ম্ম, লোক-লৌকিকতা, আহারবিহার, আমোদ-আহলাদ, সৰ্ব্বপ্রকারের স্থখ স্থবিধের কোথাও যেন কোন ক্রটি না ঘটে, পান থেকে একবিন্দু চূণ পর্যন্ত যেন না থস্তে পায়,—তার পরে স্বরাজ বল, স্বাধীনতা বল, চরক বল, খদ্দর বল, মায় ইংরাজকে ভারত সমূদ্র উত্তীর্ণ করে দিয়ে আসা পর্য্যন্ত বল, যা হয় তা’ হোক, কোন আপত্তি নেই। আপত্তি তাদের না থাকতে পারে, কিন্তু ইংরাজের আছে। শতকরা পচানব্বই জন লোকের এই হাস্যাম্পদ চাওয়াটাকে সে যদি হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলে ভারতবাসী স্বরাজ চায় না,—সে কি এত বড়ই মিথ্যা কথা বলে ? যে ইংরাজ পৃথিবীব্যাপী রাজত্ব বিস্তার করেছে, দেশের জন্য প্রাণ দিতে যে এক নিমেষ দ্বিধা করে না, যে স্বাধীনতার স্বরূপ জানে, এবং পরাধীনতার লোহার শিকল মজবুত করে তৈরী করবার কৌশল যার চেয়ে বেশী কেউ জানে না,—তাকে কি কেবল ফাকি দিয়ে, চোখ রাঙ্গিয়ে, গলায় এবং কলমে গালিগালাজ করে, তার ক্রট ও বিচূতির অজস্র প্রমা ছাপার অক্ষরে সংগ্রহ করে’, তাকে লজ্জা দিয়েই এত বড় বস্তু পাওয়া যাবে ? 8