পাতা:স্বদেশ ও সাহিত্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য মুখেই ঐ এক কথা,-বঙ্কিম “বন্দে মাতরম"-মন্ত্রের ঋষি, বঙ্কিম মুক্তিযজ্ঞে প্রথম পুরোহিত । সকলের সমবেত শ্রদ্ধাঞ্জলি গিয়ে পড়লে এক ‘আনন্দমঠে'র পরে। দেবী চৌধুরাণী', 'কৃষ্ণচরিতের উল্লেখ কেউ কেউ করলেন বটে, কিন্তু কেউ নাম করলেন না বিষবৃক্ষে’র, কেউ স্মরণ করলেন না একবার ‘কৃষ্ণকাস্তের উইল’কে । ঐ দু'টো বই যেন পূর্ণ চন্দ্রের কলঙ্ক, ওর জন্যে যেন মনে মনে সবাই লজ্জিত। তারপরে প্রত্যেক সাহিত্য-সম্মিলনীর যা অবশু কৰ্ত্তব্য, অর্থাৎ আধুনিক সাহিত্য-সেবীদের নিৰ্ব্বিচারে ও প্রবলকণ্ঠে ধিক্কার দিয়ে, সাহিতা গুরু বঙ্কিমের স্মৃতি সভার পুণ্য কাৰ্য্য সে দিনের মতে সমাপ্ত হলো । এমনিই হয় । কিন্তু একটা কথা রবীন্দ্রনাথ বলেননি । বঙ্কিমের দ্যায় আতবড় সাহিত্যিক প্রতিভা, ধিনি তখনকার দিনেও বাঙ্গল ভাষার নবরূপ, নবকলেবর সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন, 'বিষবৃক্ষ’ ও ‘কৃষ্ণকাস্তের উইল’—বঙ্গ সাহিত্যের মহামলা সম্পদ দু’টি যিনি বাঙ্গালীকে দান করতে পেরেছিলেন, কিসের জন্য তিনি পরিণত বয়সে কথা-সাহিত্যের মর্যাদা লঙ্ঘন করে’ আবার ‘আনন্দমঠ’, ‘দেবী চৌধুরাণা’, ‘সীতারাম’ লিখতে গেলেন ? কোন প্রয়োজন তার হয়েছিল ? কারণ, এ কথা তো নিঃসন্দেহে বলা যায় প্রবন্ধের মধ্যে দিয়ে স্বকীয় মত প্রচার তার কাছে কঠিন ছিল না। আশ। আছে রবীন্দ্রনাথ হয়ত কোনদিন এ সঞ্জস্যার মীমাংসা করে দেবেন। আজ সকল কথা তার বুঝিনি, কিন্তু সে দিন হয়ত আমার নিজের সংশয়ের মীমাংসাও এর মধ্যেই খুজে পাবো । কবি র্তার বাল্য-জীবনের একটা ঘটনার উল্লেখ করেছেন, সে র্তার চোখের দৃষ্টি-শক্তির ক্ষীণত। এ তিনি জানতেন না। তাই, দূরের বস্তু যখন স্পষ্ট করে দেখতে পেতেন না, তার জন্যে মনের মধ্যে কোন ১৩৮