পাতা:স্বদেশ ও সাহিত্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিক্ষার বিরোধ সে যাই হোক, এই মোটর-হাকানো ছেলেটির উন্নতির হেতুবাদ । এবং সেই পায়ের-দিকে-তাকানো ভালো ছেলেটির দুঃখের বিবরণ কবি এইখানে একেবারে স্পষ্ট করে দিয়েছেন। যথা— “পুৰ্ব্বদেশে আমরা যে সময় রোগ হ’লে ভূতের ওঝাকে ডাকচি, দৈন্ত হ’লে গ্রহ-শাস্তির জন্তে দৈবজ্ঞের দ্বারে দৌড়াচ্চি, বসন্তমারীকে ঠেকিয়ে রাখবার ভার দিচ্চি শীতলা দেবীর পরে, আর শক্রকে মারবার জন্তে মারণ উচ্চাটন মন্ত্র আওড়াতে বসেছি, ঠিক সেই সময় পশ্চিম মহাদেশে ভলটেয়ারকে একজন মেয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, শুনেচি নাকি মন্ত্র-গুণে পালকে পাল ভেড়া মেরে ফেলা যায়, সে কি সত্য ? ভলটেয়ার জবাব দিয়েছিলেন, নিশ্চয়ই মেরে ফেলা যায় কিন্তু তার সঙ্গে যথোচিত পরিমাণে সেকো বিষ থাকা চাই। ইউরোপের কোন কোণে-কানাচে যাদু মস্ত্রের পরে বিশ্বাস কিছুমাত্র নেই এমন কথা বলা যায় না, কিন্তু এ সম্বন্ধে সেকো বিষটার প্রতি বিশ্বাস সেখানে প্রায় সৰ্ব্ববাদীসম্মত । এই জন্যেই ওরা ইচ্ছা করলেই মারতে পারে এবং আমরা ইচ্ছে না করলেও মরতে পারি।” কবির এ অভিযোগ যদি সত্য হয়, তাহলে বলার আর কিছু নেই। আমাদের সব মরাই উচিত, এমন কি, সেকো বিষ খেতেও কারো আপত্তি করা কৰ্ত্তব্য নয়। কিন্তু এই কি সত্য ? ভলটেয়ার বেশী দিনের লোক নন, তার মত পণ্ডিত ও জ্ঞানী তখন সে দেশে বড় স্বলভ ছিল না, অতএব এ কথা তার মুখে কিছুই অস্বাভাবিক বা অপ্রত্যাশিত নয়, কিন্তু তখনকার দিনে অজ্ঞান ও বর্বরতায় কি এ দেশটা এতখানিই নীচের ধাপে নেবে গিয়েছিল যে ঠিক এমনি কথা বলবার লোক এখানে কেউ ছিল না যে বলে, “বাপু, ভূতের ওঝা না ডাকিয়ে বৈদ্যের বাড়ী যাও। মারতে চাও ত অন্ত পথ অবলম্বন কর, কেবল ঘরে বসে নিরালায় মারণ মন্ত্র জপ করলেই কাৰ্য্য সিদ্ধ হবে না ?” WOS) ○