পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নববর্ষ \う\○ দে ওয়া, জল আনা, বাটনা বাটা, আত্মীয়-অতিথি সকলের সেবাশেষে নিজে আহার করা, ইহা যুরোপের চক্ষে অত্যাচার ও অপমান, কিন্তু আমাদের পক্ষে ইহা গৃহলক্ষ্মীর উন্নত অধিকার ; ইহাতেই তাহার পুণ্য, তাহার সম্মান । বিলাতে এইসমস্ত কাজে যাহারণ প্রত্যহ রত থাকে, শুনিতে পাই, তাহারা ইতরভাব প্রাপ্ত হইয়া শ্ৰীশ্ৰষ্ট হয়। কারণ, কাজকে ছোটো জানিয়া তাহা করিতে বাধ্য হইলে, মানুষ নিজে ছোটো হয় । আমাদের লক্ষ্মীগণ যতই সেবার কর্মে ব্ৰতী হন, তুচ্ছ কর্মসকলকে পুণ্যকর্ম বলিয়া সম্পন্ন করেন, অসামান্যতাহীন স্বামীকে দেবতা বলিয়া ভক্তি করেন, ততই তাহারা শ্ৰীসৌন্দর্যে পবিত্রতায় মণ্ডিত হইয়া উঠেন ; তাহাদের পুণ্যজ্যোতিতে চতুর্দিক হইতে ইতরতা অভিভূত হইয়া পলায়ন করে । যুরোপ এই কথা বলেন যে, সকল মানুষেরই সব হইবার_অধিকার আছে এই ধারণাতেই মাহুষের গৌরবLL কিন্তু বস্তুতই সকলের সব হইবার অধিকার নাই, এই অতিসত্য কথাটি সবিনয়ে গোড়াতেই মানিয়া লওয়া ভালো । বিনয়ের সহিত মানিয়া লইলে তাহার পরে অণর কোনো অগৌরব নাই । রামের বাড়িতে শু্যামের কোনো অধিকার নাই, এ কথা স্থিরনিশ্চিত বলিয়াই রামের বাড়িতে কর্তৃত্ব করিতে না পারিলে ও শু্যামের তাহাতে লেশমাত্র লজ্জার বিষয় থাকে না । কিন্তু শু্যামের যদি এমন পাগলামি মাথায় জোটে যে সে মনে করে, রামের বাড়িতে একাধিপত্য করাই তাহার উচিত, এবং সেই বৃথা চেষ্টায় সে বারংবার বিড়ম্বিত হইতে থাকে, তবেই তাহার প্রত্যহ অপমান ও দুঃখের সীমা থাকে না । আমাদের দেশে স্বস্থানের নির্দিষ্ট গণ্ডীর মধ্যে সকলেই আপনার নিশ্চিত অধিকারটুকুর মর্যাদা ও শাস্তি লাভ করে বলিয়াই, ছোটো সুযোগ পাইলেই বড়োকে খেদাইয়া যায় না, এবং বড়োও ছোটোকে সর্বদা সর্বপ্রযত্নে খেদাইয়া রাখে না । \o)