পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নববর্ষ VII হইয়া আপন একাকিত্বের মধ্যে আসীন, এবং প্রতিযোগিতার নিবিড় সংঘর্ষ ও ঈর্ষাকালিমা হইতে মুক্ত হইয়। তিনি আপন অবিচলিত মর্যাদার মধ্যে পরিবেষ্টিত । এই-যে কর্মের বাসনা, জনসংঘের সংঘাত ও জিগীষার উত্তেজনা হইতে মুক্তি, ইহাই সমস্ত ভারতবর্ষকে ব্রহ্মের পথে ভয়হীন শোকহীন মৃত্যুহীন পরম মুক্তির পথে স্থাপিত করিয়াছে। যুরোপ যাহাকে ‘ফ্রীডম বলে সে মুক্তি ইহার কাছে নিতান্তই ক্ষীণ_। সে মুক্তি চঞ্চল দুর্বল ভীরু ; তাহা স্পর্ধিত, তাহা নিষ্ঠুর ; তাহা পরের প্রতি অন্ধ, তাহা ধর্মকেও নিজের সমতুল্য মনে করে না, এবং সত্যকেও নিজের দাসত্বে বিকৃত করিতে চাহে । তাহা কেবলই অন্তকে আঘাত করে, এইজন্য অন্যের আঘাতের ভয়ে রাত্রিদিন বর্মে-চর্মে অস্ত্রে-শস্ত্রে কণ্টকিত হইয়া বসিয়া থাকে ; তাহা আত্মরক্ষার জন্য স্বপক্ষের অধিকাংশ লোককেই দাসত্বনিগড়ে বদ্ধ করিয়া রাখে ; তাহার অসংখ্য সৈন্য মচুন্যত্বভ্রষ্ট ভীষণ যন্ত্রমাত্র। এই দানবীয় ‘ফ্রীডম' কোনো কালে ভারতবর্ষের তপস্তার চরম বিষয় ছিল না ; কারণ আমাদের জনসাধারণ অন্য সকল দেশের চেয়ে যথার্থভাবে স্বাধীন ছিল। এখনো আধুনিক কালের ধিক্কার সত্ত্বেও এই ‘ফ্রীডম আমাদের সর্বসাধারণের চেষ্টার চরমতম লক্ষ্য হইবে না । না’ই হইল— এই ফ্রীডমের চেয়ে উন্নততর বিশালতর ষে মহত্ত্ব যে মুক্তি ভারতবর্ষের তপস্যার ধন তাহা যদি পুনরায় সমাজের মধ্যে আমরা আবাহন করিয়া আনি, অন্তরের মধ্যে আমরা লাভ করি, তবে ভারতবর্ষের নগ্ন চরণের ধূলিপাতে পৃথিবীর বড়ো বড়ো রাজমুকুট পবিত্র হইবে । க்க এইখানেই নববর্ষের চিস্তা আমি সমাপ্ত করিলাম। আজ পুরাতনের মধ্যে প্রবেশ করিয়াছিলাম, কারণ পুরাতনই চিরনবীনতার অক্ষয় ভাণ্ডার। অাজ যে নবকিশলয়ে বনলক্ষ্মী উৎসববন্ত্র পরিয়াছেন এ বস্ত্রখানি আজিকার নহে ; যে ঋষিকবির ত্রিইভ ছন্দে তরুণী উষার বন্দন৷