পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Q ૨ স্বদেশ দেয় ; পরের দেশের ভালোটা তো শিখিতেই পারি না, নিজের দেশের ভালোটা দেখিবার শক্তি চলিয়া যায় । আর্ট স্কুলে ভর্তি হইয়াছি, কিন্তু আমাদের দেশে শিল্পকলার অাদর্শ যে কী তাহা আমরা জানিই না। যদি শিক্ষার দ্বারা ইহার পরিচয় পাইতাম, তবে যথার্থ একটা শক্তিলাভ করিবার সুবিধা হইত। কারণ এ আদেশ দেশের মধ্যেই আছে ; একবার যদি আমাদের দৃষ্টি খুলিয়া যায় তবে ইহাকে আমাদের সমস্ত দেশের মধ্যে, থালায় ঘটিতে বাটিতে, ঝুড়িতে চুপড়িতে, মন্দিরে মঠে, বসনে ভূষণে, পটে, গৃহভিত্তিতে, নানা-অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ-পরিপূর্ণ একটি সমগ্ৰমূর্তি রূপে দেখিতে পাইতাম— ইহার প্রতি আমাদের সচেষ্ট চিত্তকে প্রয়োগ করিতে পারিতাম—পৈতৃক সম্পত্তি লাভ করিয়া তাহাকে ব্যবসায়ে খাটাইতে পারিতাম । এই কারণে আমাদের শিক্ষার অবস্থায় বিলাতি চিত্রের মোহ জোর করিয়া ভাঙিয়া দেওয়া ভালো । নহিলে নিজের দেশে কী আছে তাহী দেখিতে মন যায় না, কেবলই অবজ্ঞায় অন্ধ হইয়া যে ধন ঘরের সিন্দুকে আছে তাহাকে হরাইতে হয় । আমরা দেখিয়াছি, জাপানের একজন সুবিখ্যাত চিত্ররসজ্ঞ পণ্ডিত এ দেশের কীটদষ্ট কয়েকটি পটের ছবি দেখিয়া বিস্ময়ে পুলকিত হইয়াছেন । তিনি একখানি পট এখান হইতে লইয়া গেছেন, সেখানি কিনিবার জন্য জাপানের অনেক গুণজ্ঞ তাহাকে অনেক মূল্য দিতে চাহিয়াছিল, কিন্তু তিনি বিক্রয় করেন নাই । আমরা ইহাও দেখিতেছি, যুরোপের বহুতর রসজ্ঞ ব্যক্তি আমাদের অখ্যাত দোকানবাজার ঘাটিয়া মলিন ছিন্ন কাগজের চিত্রপট বহুমূল্য সম্পদের ন্যায় সংগ্ৰহ করিয়া লইয়া যাইতেছেন । সে-সকল চিত্র দেখিলে আমাদের আট্‌ স্কুলের ছাত্ৰগণ নাসাকুঞ্চন করিয়া থাকেন। ইহার কারণ কী ? ইহার কারণ এই, কলাবিদ্যা যথার্থভাবে যিনি দেখিয়াছেন