পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१२ স্বদেশ এবং অন্য-সকল পরিত্যাগ করিয়া সমাজের উন্নততম আদশকে রক্ষণ করিবার মহন্তারই যাহাদিগকে পবিত্র ও পূজনীয় করিয়াছে। যুরোপেও অবিশ্রাম কর্মীলোড়নের মাঝে মাঝে এক-এক জন মনীষী উঠিয়া ঘূর্ণাগতির উন্মত্ত নেশার মধ্যে স্থিতির আদর্শ লক্ষ্যের আদর্শ, পরিণতির আদর্শ ধরিয়া থাকেন। কিন্তু দুই দণ্ড দাড়াইয়া শুনিবে কে ? সম্মিলিত প্রকাণ্ড স্বার্থের প্রচণ্ড বেগকে এই প্রকারের দুই-এক জন লোক তর্জনী উঠাইয়া রুথিবেন কী করিয়া ? বাণিজ্য-জাহাজে উনপঞ্চাশ পালে হাওয়া লাগিয়াছে, যুরোপের প্রাস্তরে উন্মত্ত দশকবৃন্দের মাঝখানে সারি সারি যুদ্ধঘোড়ার ঘোড়দৌড় চলিতেছে— এখন ক্ষণকালের জন্য থামিবে কে ? এই উন্মত্ততায়, এই প্রাণপণে নিজ শক্তির একান্ত উদঘাটনে অtধ্যাত্মিকতার জন্ম হইতে পারে, এমন তর্ক আমাদের মনেও ওঠে । এই বেগের আকর্ষণ অত্যস্ত বেশি, ইহা অামাদিগকে প্রলুব্ধ করে ; ইহা যে প্রলয়ের দিকে যাইতে পারে এমন সন্দেহ আমাদের হয় না। ইহা কী প্রকারের ? যেমন চারধারী যে একটি দল নিজেকে সাধু ও সাধক বলিয়া পরিচয় দেয়, তাহারা গজার নেশাকে আধ্যাত্মিক আনন্দলাভের সাধনা বলিয়া মনে করে। নেশায় একাগ্রতা জন্মে, উত্তেজনা হয়, কিন্তু তাহাতে আধ্যাত্মিক স্বাধীন সবলতা হ্রাস হইতে থাকে । অণর সমস্ত ছাড়া যায়, কিন্তু এই নেশার উত্তেজনা ছাড়া যায় না ; ক্রমে মনের বল যত কমিতে থাকে নেশার মাত্রাও তত বাড়াইতে হয় । ঘুরিয়া নৃত্য করিয়া বা সশব্দে বাদ্য বাজাইয়া, নিজেকে উদভ্ৰান্ত ও মূৰ্ছান্বিত করিয়া যে ধর্মোন্মাদের বিলাস সম্ভোগ করা যায় তাহাও কৃত্রিম । তাহাতে অভ্যাস জন্মিয়া গেলে তাহা অহিফেনের নেশার মতো আমাদিগকে অবসাদের সময় কেবলই তাড়না করিতে থাকে। আত্মসমাহিত শাস্ত একনিষ্ঠ সাধনা ব্যতীত যথার্থ স্থায়ী মুল্যবান কোনো