পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*やり স্বদেশ করিবার গৌরব হইতে কেন তাহারা নিজেকে ও ব্রাহ্মণসমাজকে বঞ্চিত করেন ? প্রাচীনকালে যখন ব্রাহ্মণই একমাত্র দ্বিজ ছিলেন না, ক্ষত্রিয় বৈখ্যও দ্বিজসম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন, যখন ব্রহ্মচর্য অবলম্বন করিয়া উপযুক্ত শিক্ষণলাভের দ্বারা ক্ষত্রিয়-বৈশ্ব্যের উপনয়ন হইত, তখনি এ দেশে ব্রাহ্মণের আদশ উজ্জল ছিল । কারণ, চারি দিকের সমাজ যখন অবনত তখন কোনো বিশেষ সমাজ আপনাকে উন্নত রাখিতে পারে না, ক্রমেই নিম্নের আকর্ষণ তাহাকে নীচের স্তরে লইয়া আসে । ভারতবর্ষে যখন ব্রাহ্মণই একমাত্র দ্বিজ অবশিষ্ট রহিল, যখন তাহার আদশ স্মরণ করাইয়া দিবার জন্য, তাহার নিকট ব্রাহ্মণত্ব দাবি করিবার জন্য চারি দিকে আর কেহই রহিল না, তখন তাহার দ্বিজত্বের বিশুদ্ধ কঠিন আদশ দ্রুত বেগে ভ্ৰষ্ট হইতে লাগিল। তখনি সে জ্ঞানে বিশ্বাসে রুচিতে ক্রমশ নিকৃষ্ট অধিকারীর দলে আসিয়া উত্তীর্ণ হইল। চারি দিকে যেখানে গোলপাতার কুঁড়ে সেখানে নিজের বিশিষ্টতা রক্ষা করিতে হইলে একটা আটচালা বাধিলেই যথেষ্ট ; সেখানে সাতমহল প্রাসাদ নির্মাণ করিয়া তুলিবার ব্যয় ও চেষ্টা স্বীকার করিতে সহজেই অপ্রবৃত্তি জন্মে। প্রাচীনকালে ব্রাহ্মণ ক্ষত্ৰিয় বৈশু দ্বিজ ছিল, অর্থাৎ সমস্ত আর্যসমাজই দ্বিজ ছিল ; শূদ্র বলিতে যে-সকল লোককে বুঝাইত তাহারা সাওতাল ভিল কোল ধাঙড়ের দলে ছিল । আর্যসমাজের সহিত তাহাদের শিক্ষা রীতিনীতি ও ধর্মের সম্পূর্ণ ঐক্যস্থাপন একেবারেই অসম্ভব ছিল। কিন্তু তাহাতে কোনো ক্ষতি ছিল না, কারণ সমস্ত আর্যসমাজই দ্বিজ ছিল অর্থাৎ সমস্ত আর্যসমাজের শিক্ষা একই রূপ ছিল । প্রভেদ ছিল কেবল কর্মে । শিক্ষা একই থাকায় পরস্পর পরস্পরকে আদর্শের বিশুদ্ধিরক্ষায় সম্পূর্ণ আমুকুল্য করিতে পারিত। ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্ব ব্রাহ্মণকে ব্রাহ্মণ হইতে সাহায্য করিত, এবং ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্ৰিয় বৈশ্বকে ক্ষত্ৰিয় বৈশ্য হইতে সাহায্য