পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাজভেদ Ե Պ অন্য সমস্ত প্রয়োজনকে উত্তরোত্তর খর্ব করিয়া সৈনিকগঠনে য়ুরোপ প্রতিদিন পীড়িত হইয়া উঠিতেছে । সৈন্য-সম্প্রদায়ের অতিভারে তাহার সামাজিক সামঞ্জস্য নষ্ট হইতেছে । ইহার সমাপ্তি কোথায় ? নিহিলিস্টদের অগ্ন্যুৎপাতে না পরম্পরের প্রলয়সংঘর্ষে ? আমরা স্বার্থ ও স্বেচ্ছাচারকে সহস্র বন্ধনে বদ্ধ করিয়া মরিতেছি ইহাই যদি সত্য হয়, য়ুরোপ স্বার্থ ও স্বাধীনতার পথ উন্মুক্ত করিয়া চিরজীবী হইবে কি না তাহারও পরীক্ষা বাকি আছে । যাহাই হউক, পূর্ব ও পশ্চিমের এই-সকল প্রভেদ চিন্তা করিয়া বুঝিয়া দেখিবার বিষয় । যুরোপের প্রথাগুলিকে যখন বিচার করিতে হয় তখন যুরোপের সমাজতন্ত্রের সহিত তাহাকে মিলাইয়া বিচার না করিলে, আমাদের মনেও অনেক সময় অন্যায় অবজ্ঞার সঞ্চার হয় । তাহার সাক্ষী, বিলাতি সমাজে কন্যাকে অধিক বয়স পর্যন্ত কুমারী রাখার প্রতি আমরা কটাক্ষপাত করি ; আমাদের নিকট এ প্রথা অভ্যস্ত নহে বলিয়া আমরা এ সম্বন্ধে নানা প্রকার আশঙ্কা প্রকাশ করিয়া থাকি । অথচ বালবিধবাকে চিরজীবন অবিবাহিত রাখা তদপেক্ষা আশঙ্কাজনক, সে কথা আমরা বিচারের মধ্যেই আনি না । কুমারীর বেলায় আমরা বলি মহন্ত প্রকৃতি দুর্বল ; অথচ বিধবার বেলায় বলি, শিক্ষাসাধনায় প্রকৃতিকে বশে আনা যায়। কিন্তু আসল কথা, এ-সকল নিয়ম কোনো নীতিতত্ত্ব হইতে উদ্ভূত হয় নাই, প্রয়োজনের তাড়নে দাড়াইয়া গেছে। অল্প বয়সে কুমারীর বিবাহ হিন্দুসমাজের পক্ষে যেমন প্রয়োজনীয়, চিরবৈধব্যও সেইরূপ । সেইজন্যই আশঙ্কা সত্ত্বেও বিধবার বিবাহ হয় না এবং অনিষ্ট অস্থবিধা সত্ত্বে ও কুমারীর বাল্যবিবাহ হয়। অবশুকের নিয়মেই যুরোপে অধিক বয়সে কুমারীর বিবাহ এবং বিধবার পুনর্বিবাহ প্রচলিত হইয়াছে। সেখানে অপ্রাপ্তবয়স্ক বালিকাকে লইয়া স্বাধীন গৃহ-স্থাপন সম্ভবপর নহে । সেখানে বিধবা কোনো পরিবারের আশ্রয় পায় না