পাতা:স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
(১৭)

হইতেন। লোকে উদাসীনভাবে যাহার কষ্ট চাহিয়া দেখিয়াছে,— যাহার কাতরতায় নিমীলিতনয়নে নিশ্চেষ্টভাবের পরিচয় দিয়াছে, যাহার মলিনভাব দেখিয়া, ঘৃণায় মুখ বিকৃত ও নাসিকা সঙ্কুচিত করিয়া, অন্য দিক দিয়া চলিয়া গিয়াছে, তিনি পবিত্র ভাবে তাহাদিগকে পবিত্র পদার্থের ন্যায় তুলিয়া, শান্তির অমৃতময় ক্রোড়ে স্থাপিত করিতেন। সম্রাট শাহ আলম যখন সিংহাসন হইতে অপসারিত হয়েন, বৃদ্ধ,অন্ধ ও অধঃপতনের চরমসীমায় পতিত হইয়া, পরপ্রদত্ত অর্থে জীবিকানির্বাহ করিতে থাকেন, তখন তিনি করুণরসপূর্ণ কবি: তায় এই বলিয়া আপনার চিত্তবিনোদন করিতেন, “দুর্দ্দশারপ্রবল ঝটিকা আমাকে পরাভূত করিয়াছে। উহা আমার সমস্তগৌরব অনন্তবায়ুরাশির মধ্যে বিক্ষিপ্ত করিয়াছে, এবং আমার রত্নসিংহাসনও দূরে ফেলিয়া দিয়াছে। গাঢ় অন্ধকারে নিমগ্ন হইলেও এখন আমি দরিদ্র 'ভাবে পবিত্র ও সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের দয়ায় উজ্জ্বল হইয়া, এই কষ্টময়, এই অন্ধকারময় স্থান হইতে উঠিতে পারিব।” দয়ার সাগর বিদ্যাসাগরও ঐ সকল নিরুপায় দুঃখীদিগকে দরিদ্রভাবে পবিত্র বলিয়াই জ্ঞান করিতেন। কল্পিত আছে, একদা তিনি প্রাতঃকালে ভ্রমণ করিতে করিতে এই নগরের প্রান্তভাগ অতিক্রম করিয়া কিয়দ্র গিয়াছেন, সহসা দেখিলেন, একটি বৃদ্ধা অতিসার রোগে আক্রান্ত হইয়া, পথের পার্শে পড়িয়া রহিয়াছে; দেখিয়াই তিনি ঐ মললিপ্ত বৃদ্ধাকে পরম যত্নে ক্রোড়ে করিয়া আনিলেন, এবং তাহার যথোচিত চিকিৎসা করাই লেন। দরিদ্রা বৃদ্ধা তাঁহার যত্নে আরোগ্য লাভ করিল। যতদিন সে জীবিত ছিল, তত দিন তাহার গ্রাসাচ্ছাদনের কষ্ট হয় নাই। বিদ্যাসাগর মহাশয় প্রতিমাসে অর্থ দিয়া তাহার সাহায্য করিতেন।[১]


  1. এইরূপ গল্পগুলি সঞ্জীবনী, ইণ্ডিয়ান নেশন, এডুকেশন গেজেট প্রভৃতি হইতে সংগৃহীত হইয়াছে।