পাতা:স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
(১৮)

বিদ্যাসাগর মহাশয়ের এক জন বিশ্বস্ত কর্মচারী, তাহার অসামান্য দয়ার সম্বন্ধে নিম্নলিখিত গল্পটি “দৈনিক” পত্রে প্রকাশ করেন;—

 “এক দিন বিদ্যাসাগর মহাশয় উক্ত কর্মচারীকে বলিলেন, দেখ, কলুটোলার অমুক গলির অমুক নম্বর বাড়ীতে এই নামে এক জন মাদ্রাজবাসী আছেন। জানিয়াছি, তিনি অর্থাভাবে সাতিশয় কষ্ট পাইতেছেন। অতএব তুমি তথায় গিয়া সবিশেষ সংবাদ লইয়া আইস।” বিদ্যাসাগর মহাশয়ের আদেশে কর্মচারী নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত হইয়া, প্রথমে গৃহস্বামীর দেখা পাইলেন। তাহার নিকট উক্ত মাদ্রাজবাসীর নামোল্লেখ করাতে তিনি বলিলেন, “হ! আমার এই বাটীর নিম্নতলস্থ গৃহে তিনি সপরিবারে বাস করেন। আমি তার নিকট ছয় মাসের ভাড়া ৩০ টাকা পাইব। তিনি উহা দিতে পারিতেছেন না। তাহাকে ভাড়া পরিশোধ করিয়া উঠিয়া যাইবার জন্য পীড়াপীড়ি করিতেছি। কিন্তু কি করি, তিনি অর্থাভাব প্রযুক্ত আজ দুই তিন দিন সপরিবারে অনাহারে রহিয়াছেন।” কর্মচারী গৃহস্বামীর এই কথা শুনিয়া, উক্ত মাদ্রাজবাসীর নিকট যাইয়া দেখিলেন যে, তিনি একটি সঙ্কীর্ণ গৃহে পাঁচটি কন্যা ও দুইটি অল্পবয়স্ক পুত্র লইয়া সামান্য দমার উপর বসিয়া রহিয়াছেন। পুত্রকন্যাঞ্চণ রুগ্ন ও অনাহারে শীর্ণ। কর্মচারী এই শশাচনীয় দশাগ্রস্ত মাদ্রাজবাসীর সহিত আলাপে প্রবৃত্ত হইলে, তিনি কহিলেন, “আমি এই কলিকাতা সহরে অনেক বড় লোকের নিকট আমার কষ্ট জানাইয়াছিলাম। কিন্তু কেহই আমার দুরবস্থায় দয়া হইয়া একটি কপর্দক দিয়াও আমার সাহায্য করেন নাই। অবশেষে একটি বাবুর নিকট ভিক্ষার্থ উপস্থিত হই। তিনি ভিক্ষা না দিয়া, একখানি পোষ্টকার্ডে পত্র লিখিয়া, আমার হাতে দিয়া বলিলেন— ‘এই সহরে এক পরম দয়ালু বিদ্যাসাগর আছেন। আমি তোমারই