পাতা:স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

(৩)

অভিনব তত্ত্বের উদ্ভাবন করিয়া, সহৃদয়দিগের প্রীতিবর্দ্ধন করিতে পারেন,” কিন্তু ভোগাভিলাষশূন্যতায়—পরহিতৈষিতায়, সর্ব্বোপরি সর্ব্বার্থত্যাগের মহিমায় তিনি চিরকাল সর্ব্বশ্রেষ্ঠ, সর্বসন্মানিত ও সর্ব্বজনের আদরণীয় হইয়া, করুণার পবিত্র মন্দিরে পবিত্র প্রীতির পুষ্পাঞ্জলি পাইবেন। আমরা আজ যাঁহার গুণকীর্ত্তন জন্য সমবেত হইয়াছি, সেই স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরই উক্ত অলোকসামান্য মহাপুরুষ বলিয়া পরিগণিত হইয়াছেন, এবং সেই বিদ্যাসাগরই বাল্যে শ্রমশীলতার সহিত অপরিসীম কষ্টসহিষ্ণুতা, যৌবনে বিলাস বিদ্বেষের সহিত অপূর্ব তেজস্বিতা, ও বার্দ্ধক্যে লোকহিতকর কার্য্যানুষ্ঠানের সহিত অসামান্য দানশীলতার পরিচয় দিয়া, তেজস্বিতাভিমানী ও সভ্যতাস্পর্দ্ধী ইউরোপীয়ের সমক্ষে বাঙ্গালীর মুখোজ্জ্বল করিয়াছেন।

 বিদ্যাসাগর মহাশয় সমৃদ্ধিপূর্ণ সংসারে জন্মগ্রহণ করেন নাই, সমৃদ্ধির ক্রোড়ে লালিত হয়েন নাই, বা সমৃদ্ধিসুলভ বিষয়ভোগেও সংবর্দ্ধিত হইয়া উঠেন নাই। গগনবিদারী বাদ্যধ্বনিতে তাঁহার জন্মগ্রহণঘটনা ঘূচিত হয় নাই, গায়ককুলের কলকণ্ঠনিঃসৃত সঙ্গীত রবের মধ্যেও তাঁহার উদ্দেশে মাঙ্গলিক কার্য্য অনুষ্ঠিত হয় নাই, দূরবর্ত্তী জনপদবাসীরাও তাহার জন্মগ্রহণ জন্য সমবেত হইয়া, বিবিধ উৎসবে উল্লাসপ্রকাশ করে নাই। তিনি বাঙ্গালার একটি সামান্য পল্লীতে সঙ্কীর্ণ পর্ণকুটীরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁহার পিতামহ সাংসারিক বিষয়ে এক প্রকার উদাসীন ছিলেন। তাঁহার পিতা এক এক দিন অনশনে বা অর্দ্ধাশনে থাকিয়া যাহা কিছু উপার্জন করিতেন, তাঁহাতেই অতিকষ্টে সংসার চালাইতেন। এইরূপ দরিদ্র পিতা এবং দরিদ্রতার প্রতিমূর্ত্তি পিতামহী ও জননী, বিদ্যাসাগরের অবলম্ব ছিলেন। পিতা অদূরবর্ত্তী হাট হইতে জিনিস পত্র লইয়া বাড়ীতে