পাতা:স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
(৫)

বৎসর। তাহার বাসগ্রাম কলিকাতা হইতে প্রায় ২৬ ক্রোশ দূরবর্ত্তী। তখন রেলওয়ে ছিল না—স্টীমার ছিল না। তখন পদব্রজে দুর্গম পথ অতিবাহন করিয়া, কলিকাতায় আসিতে হইত। পথ যেরূপ দুর্গম, দস্যুতস্করের উপদ্রবে সেইরূপ বিপদসঙ্কুল ছিল। অষ্টম বর্ষীয় বালককে এই দুর্গম ও বিপত্তিপূর্ণ পথের অধিকাংশ পদব্রজে অতিক্রম করিতে হইয়াছিল। রাজ্যতাড়িত ও নিরতিশয় দুর্দশাগ্রস্ত হুমায়ুন যখন মরু-ভূমধ্যবর্ত্তা ক্ষুদ্র জনপদে স্বীয় তনয়ের জন্মগ্রহণের সংবাদ পাইয়া, অন্য সম্পত্তির অভাবে একটি সামান্য কস্তূরীর খণ্ড বন্ধুদিগের মধ্যে বিতরণ করেন, তখন তিনি বোধ হয় কখনও ভাবেন নাই যে, নবপ্রসূত বালক এক সময়ে সমগ্র ভারতের অদ্বিতীয় অধীশ্বর হইবে। দরিদ্র ঠাকুরদাস যখন অষ্টমবর্ষীয় পুৎত্রকে সঙ্গে করিয়া কলিকাতায় তাঁহার প্রতিপালকের গৃহে পদার্পণ করেন, তখন তিনিও বোধ হয় ভাবেন নাই যে, কালে এই বালক সমগ্র মহৎ ব্যক্তির গৌরবস্পর্দ্ধী হইয়া উঠিবে। সময়ের পরিবর্ত্তনে বালকদ্বয়ের অদৃষ্টের পরিবর্তন হইয়াছিল। মরুপ্রান্তরবর্ত্তী সামান্য নগরে দুঃখদারিদ্র্যে নিপীড়িতা জননীর রোদনধ্বনির মধ্যে যিনি জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন,—তরুণবয়সে যাঁহাকে নানাকষ্ট সহিয়া দুরূহ কার্য্য সাধন করিতে হইয়াছিল, সেই আকবর এক সময়ে দিল্লীর রত্ন সিংহাসন অধিকার করিয়াছিলেন, এক সময়ে তাঁহারই উদ্দেশে শত সহস্র কণ্ঠ হইতে ‘দিল্লীশ্বরো বা জগদীশ্বরো বা” বাক্য নির্গত হইয়াছিল। আর সামান্য পর্ণকুটীর যাঁহার আশ্রয়স্থল ছিল—যৎ সামান্য আহারীয় যাঁহার রসনাতৃপ্তি ও উদরপূর্ত্তির একমাত্র সম্বল ছিল; যিনি মলিনবসনে—পথ শ্রান্তিতে অবসন্ন হৃদয়ে এবং নিরতিশয় দীনভাবে এই মহানগরীতে পদার্পণ করিয়াছিলেন, এক সময়ে তিনিট জগজ্জয়ী সমাটের সিংহাসন অপেক্ষাও উচ্চাসনে সমা-