পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৮ না । প্রথম প্রখম জ্যোতিৰ্ম্ময়া পণ্ডিতের কাছে যখন দেশ-পীড়নের কথা শুনিত, তখন পিতার নিকট সে কথা তুলিয়া তাহার সত্যমিথ্যা যাচাই করিয়া লইতে চাঙ্গিত । রাজা কিন্তু এ সকল কথায় তাঁহাকে প্রশ্রয় দিতেন না—প্রায়ই রাগ করিয়া বণিতেন, "এ সব খবর তোমাকে কে দেয় ? খবরের কাগজ পড় বুঝি ? আমি বারণ করে দেব বাড়ার ভিতরে যেন খবরের কাগজ না যায় । বেশ জেনে, খবরের কাগজের অনেক কথাই অতিরঞ্জিত, তোমার কোমল মনের উপর সব খবরে অনর্থক আঘাত দিচ্ছে।” জ্যোতিৰ্ম্ময়ার মত বুদ্ধিম ;ী বালিকার নিকট পিতার মনের ভাব অপ্রচ্ছন্ন রহিল না-- তিনি সে কেন এসব কথা কথtকে জানিতে দিতে চান না তাহার সে বেশ একরকম অর্থ করিয়া লইল । পণ্ডিত মহাশয় যে তাহ1র গেজেট, এ কথা কিন্তু একেবারেই পিতাকে জানাইল না, বুপিাল, তাহা হইলে গঙ্গার কাজটি থাকিবে না। জ্যোতিৰ্ম্মস্থা এ সম্বন্ধে ক্রমশঃ সাবধানে পি ৩ার সহিত কথা কহিতে আরম্ভ করিল-– এই এক বিষয়ে তাহার মনের ভাব পিতার নিকট অপ্রকাশিত রাখিল ; ভাবিল, যদি বিধাতা দিন দেন, তখন পিতাকেও ৩tহায় পক্ষ করিয়া লইবে । রাজা আপাততঃ উল্লিখিত ঘরে টেবিলের নিকট চৌকিতে বসিয়াছিলেন । তাহার সম্মুখে কবিতার বই একখানা খোলা, কিন্তু সে দিকে তাহার দৃষ্টি নাই ; গুইদেওয়ালে টাঙ্গান রাজপরিবারের বহু তৈলচিত্রের মধ্যে একখানির দিকে তিনি তন্ময়ভাবে চাহিয়াছিলেন । চিত্ৰখানি তাহার প্রমাতামইী প্ৰিfLসল দেবীর বাল্যকালের অশ্বারূঢ়। মুক্তি। রাণীর পিতা সোমেশ্বর রাঙ্গের অঙ্কিত ছোট পেনসিল-স্কেচ হইতে পরে ইহা একখানি বড় তৈলচিত্রে পরিণত হইয়াছে। এ চিত্রে বালিকা বিচিত্রা যোদ্ধ পুরুষের সাজে সজ্জিত। তাহার মস্তকে শিরধাণ, বক্ষে.ঢাল, হস্তে বর্ষ এবং কটিদেশে তরবারী বিলম্বিত । এই সজে তাহাকে অতি সুন্দর দেখাইতেছিল । রাণী বিচিত্রা দেবীর সম্বন্ধে অনেক প্রবাদবাক্য রাজ্যমধ্যে প্রচলিত। তাহীর মধ্যে একটি এই যে—এক সময় রাজ্যে বগী আক্রমণের বড় ভয় হইয়াছিল । তখন রাজজামাতা----রাণীর স্বামী দেশে ছিলেন না । স্বীজকোতোয়ালের সহিত পরামর্শ করিয়া দেওয়ান মহাশয় স্থির করিলেন যে, বালক পুত্র দুইটির সহিত স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী রাণীকে অন্যত্র কোথাও পাঠাইয়া দিয়া পণদানে সন্তুষ্ট করিয়া তাহারা বর্গীকে বিদায় দিবেন। কিন্তু রাণী এ প্রস্তাব অগ্রাহ করিয়া স্বয়ং সৈন্তবাহিনীর নায়করূপে অশ্বারোহণ করিলেন। সৈন্যগণের মধ্যে তখন প্রবল উৎসাহ জাগিয়া উঠিল । স্বয়ং মহিষমদিনী যুদ্ধে আগত, এই বিবেচনা করিয়া ভীত বগিদল রাণীমূৰ্ত্তিকে দূর হইতে প্রণাম করিয়া পলায়নপর হইল । এই অশ্বারূঢ়া বিচিত্রামুৰ্ত্তির দিকে চাহিয়া রাজা আজ ভাবিতেছিলেন, এ হেন তেজস্বিনী রাণীর বংশধরগণ অধুনা কিরূপ হীনবল নুিপ্তেজ হুইয়া পড়িয়াছে । এ কালে রাজভবনে প্রহরীর হস্তেই বন্দুক তলোয়ার শোভা পায় ! শীকারের সময় ছাড়া সৈন্ত-বেশে অস্ত্র ধরিবার অধিকার পর্য্যন্ত তাহাদের এখন নাই। ধীরে ধীরে তাহার একটা দীর্ঘনিশ্বাস পড়িল । জ্যোতিৰ্ম্মন্ধীকে তিনি যাঁহাই বোঝান, নিজের মনে এ হীনতা তিনি খুবই অনুভব করেন। কিন্তু ইহা ভাবিয়া তাহার দীর্ঘনিশ্বাস পড়ে মাত্র-উষ্ণ শোণিত পুর্বের দ্যায় এখন অার চঞ্চল হইয়া ওঠে না, মরিবার জন্ত প্রবল আকাজক্ষা জন্মায় না । এক সময় কথার দ্যায় অত্যাচার-পীড়ন হইতে দুৰ্ব্বলকে রক্ষা করিবার জন্ত অদ্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি যেরূপ উত্তেজিত হইয়া উঠিতেন, সে তেজ সে উত্তেজন তাহার স্তিমিত হইয়া আসিয়াছিল। অনেকক্ষণ ধরিয়া রাজা এই ছবিখানি নিরীক্ষণ করিয়া দেখিতে লাগিলেন । যখনই তিনি এ ছবি দেখেন, তাহার মনে হয় এ যেন জ্যোতিৰ্ম্ময়ীরই প্রতিকৃতি । পুরুষ-বেশ ধারণ করিলে বুঝি বা তাহাকে ঠিক এই রকমই দেখাইবে । বড় ইচ্ছা করে এইরূপ সাজে তিনি কন্ঠীর একখানি ছবি তুলিয়া লন। বিচিত্রা দেবীর সেই বসন-ভূষণ শিরস্ত্রাণ এখনও মাতার নিকট সযত্নে রক্ষিত আছে, তাহাও তিনি জানেন । তবে এ প্রস্তাবে মাতা-পুত্রে যে একটা তুমুল দ্বন্দু বাধিয়া উঠিবে—সেই কল্পনাতেই তিনি এ ইচ্ছাটাকে মনে মনেই চাপিয়া রাখিতে বাধ্য হইয়াছেন । হঠাৎ তাহার চিস্তাতে যাধা পড়িল ; দ্বারস্থ হরকরা গৃহপ্রবেশ করিয়া রাজাকে জানাইল যে, “গৃহ-কৰ্ম্মচারী জ্ঞানবাবু জরুরি সংবাদ দিতে আসিয়াছেন।” রাজাদেশে জ্ঞানবাবু সমীপস্থ হইয়া কহিলেন— "ধৰ্ম্মাবতার, মহারাণীর অনস্তব্রতের ভেট ভট্টপল্লীতে