পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৫২ নহে, সাহস দেখাইবার এমন সুযোগও কদাচিৎ ঘটে, থতরাং সে নভেলখানা বন্ধ করিয়া--সাহেবের ব্যাগটার উপরে বেশ ভাল রূপেষ্ট পা লম্বা করিয়া দিয়া afo, “Why should I get down, you sir pigledy ? You may go out if you like I" বানরটার স্পৰ্দ্ধায় সাঙ্গেব অবাক ইয়া গেলেন । উপরের বেঞ্চ হটতে চান্ত নামষ্টিয়া বিকৃত কণ্ঠে-all right sir” বলিয়া তাঙ্গার প্রতি বুধি বাগাইলেন, অনাদি লাদশষ্টয়া শয্যা •্যাগ করিল, কিন্তু সোজা হইয়া দাড়াইবার পুর্বেই সাহেবের এক ঘুষি তাতার মাথায় পড়িল। যদি সেই উদ্যত বজ্ৰমুষ্টি স্বরাপানের ফলে হীনবল হইয়া না পড়িত, তবে অনাদির প্রাণরক্ষা দায় হইয়া উঠিত। কিন্তু এই স্থতি মুষ্ট্যাঘাতের বিনিময়ে সাহেবের মাথায় অনাদির যে সবল ঘুষি দুইটি পড়িল, তাহাতে সাহেব বেশ সচেতন হইয়া উঠিলেন। তথন বাম হস্ত ঢালরূপে মুখের সম্মুখে রাখিয়া ডান হস্ত বাড়াইয়া কহিলেন,—"Beg your pardon sir— We are quits now, let us be friends.” পদানত শক্রকে ক্ষমা করা হিন্দুর পক্ষে সহজ ধৰ্ম্ম, সাহেবের আহবান-বাক্যে অনাদি প্রফুল্পভাবেই হাত বাডাইয়া দিল । গোলমালে ইতিপূৰ্ব্বেই শরতের নিদ্রাভঙ্গ হইয়৷ গিয়াছিল । কিন্তু উভয়ের দ্বন্দ্বযুদ্ধে অনাবশু্যক তৃতীয় হস্তক্ষেপ করিতে ইচ্ছ না করিয়া তিনি নীরবে পশ্চাতে দাড়াইয়াছিলেন। যেমন মিটমাট হইয়া গেল, অমনি তিনি অনাদিকে রুমাল ভিজাইয়৷ আনিতে আজ্ঞা করিয়া সঙ্গের ব্যাগটা খুলিয়া ঔষধ বাছির করিলেন । সাহেব এ সময়েও নিজের ব্যাগটার কথা ভোলেন নাই ; লড়াতাড়ি সেটা অনাদির বেঞ্চ হইতে টানিয়া লইয়া পাশে রাখিয়া, শরতের পরিম্যক্ত শয্যায় বসিয়া হাপাইতে লাগিলেন—আর শরৎ মুনিপুণ হস্তে র্তাহার আহত মস্তকে পটি বাধিয়া দিলেন । কার্য শেষ করির তাহাকে কহিলেন-- আমি বরঞ্চ উপরে যাইতেছি, আপনি এইখানেষ্ট শয়ন করুন ।” শরৎ উপরে উঠিলেন ; নভেল পড়িবার প্রবৃত্তি আর অনাদির তখন ছিল না,—বইথান বালিসের নীচে গুজিয়া সেও • ক্রয়া প৬িল । সাহেব বিনা বাক্যব্যয়ে কিছুক্ষণ সেই ভাবেই বসিয়া রছিলেন। তাহার পর ব্যাগটা খুলিয়। একটা শিশির তীব্ৰ উপদশন—একনিশ্বাসে পান করিয়৷ শয্যাগহণ করিলেন । কামরা আবার নীরব হইয়া পড়িল । স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী খানিক পরে অনাদির মনে হইল,—তাহার বুকের উপর যেন পাথরের ভার চাপিয়াছে—নিশ্বাস বন্ধ হইয়া আসিতেছে । অন্তি কষ্টে ঘুমের ঘোরেই সে চোখ মেলিয়া দেখিল, সাহেব দুই হাতে তাহার qof 5tfool of CSTER,--"You savage, you niggard, you dared to insult me I Don’t you know who I am I My nick-name is Satan " অনাদির ভখন সকল শক্তি অবসিত, মুছার পুৰ্ব্বে লোকের যেরূপ অবস্থা হয়, সেইরূপ অবস্থা,— দারুণ কষ্টের একটা চেতনা ছাড়া অন্য কোনরূপ জ্ঞান নাই। সেই অবস্থায় সে অস্ফুট কণ্ঠে জাৰ্ত্তনাদ করিয়া উঠিল । শরৎকুমার সে শব্দে সহসা জাগরিত হইয়া - লাফাইয়া নামিয়া পশ্চাৎ হইতে সাহেবের কোট ধরিয়া সজোরে টানিলেন । সাহেব পড়িতে পড়িতে উঠিয় দাড়াইলেন। অদূরে দরজার কাছে তাহার ফুলগাছের টুক্‌রিতে একথান কুকুড়ি বেঁধান ছিল ; সেই কুকুড়িখানা তুলিয়া লইয়া বাঘ যেমন মুখের শীকার ফেলিক্সা আক্রমণকারীকে দেখে, সেইরূপ ভীষণ দৃষ্টিপাত করিয়া তাহাকে আক্রমণ করিলেন। তখনও নেশায় তাহার পী টলমল করিতেছিল, হাতেরও জোর ছিল না । সুতরাং কুকৃড়িখান। কাড়িয়া লওয়া শরতের পক্ষে কঠিন হইল না । তবে পিপড়ারও মরণ-কমড়ের জোর আছে, সাহেবের স্বলিত হস্তের আক্রমণও একেবারে ব্যর্থ হইল না । টানাটানির সময় কুকৃড়ির অগ্রভাগ শরতের হাতের কব জার উপর একটু বিধিয়া গিয়া দু'এক ফোটা রক্ত পড়িল - কুকৃড়িখানা জানালার বাহিরে নিক্ষেপ করিয়া শরং বাথরুমে গিয়া হাতটা জলের নীচে রাখিতেই রক্তপড়। বন্ধ হইয় গেল । ঘরে আসিয়া দেখিলেন,-—সাহেব তাহার শয্যায় শুইয়া স্বলিত বচনে অশ্রাব্য গালিবর্ষণ করিতেছেন, আর অনাদি যেন তখনও ঠিক সচেতন হইয় উঠে নাই ; কেমন যেন মুগ্ধনেত্রে চাহিয়া আছে । তাহার ভয় হইল—হয় ত বা বক্ষে সে বিশেষ আঘাত পাইয়াছে । নিঞ্জেব হাতের কথা একেবারেই ভুলিয়া গিয়া তিনি ভাহাকে পরীক্ষা করিতে বসিলেন । তাছার স্পর্শে অনাদির সে মোস্থভাব কাটিয়া গেল ; তিনি তখনও প্রফুল্লচিত্তে তাহার কপালে আৰ্দ্ৰ হাত বুলাইতে লাগিলেন । প্রাতঃকালে ভূত্য আসিয়া সাহেবের নিদ্রাভঙ্গ করিল। প্রসাদপুরের একটা ষ্টেশন আগে বিষাদপুর-—সেইখানে তাহারা নামিয়া গেল । শরৎ পরে