পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/২৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নব ডাকাতের ডায়েরি বলা বাহুল্য, আমিও হেয়ার স্কুলে পড়িতাম । পিতৃ-বিয়োগের পর আমার পড়াশুনার প্রতি কেমিক্যাল সাহেবের এমন তীব্রভৃষ্টি পড়িল যে, আমি ব্যতিব্যস্ত হইয়া উঠিলাম। বছরখানেক টিকিয়া থাকিতে পারিলে, এণ্টেন্সটা সহজেই পাশ কয়িতে পারিতাম । কেন না, তিনি নিজে যত্ব করিয়া সন্ধ্যাকালে আমাকে পড়াইতেন ; ছাত্রজীবনে ইহা পুরম সৌভাগ্য। কিন্তু অতিরিক্ত মুখ-সৌভাগ্য বহু সময়ে অমুখেরই কারণ হইয়া উঠে ; অন্ততঃ এ সৌভাগ্য অামি বরদাস্ত করিতে পারিলাম না । বছর ত বছর বটে, দিনও নয়, মুহূৰ্ব ত নয়ই । বারোটা মাসে ছুটগুলা সব পুরাপুরি বাদ-সাদ দিয়া তবুও ত অন্ততঃ ছ'শ পয়ত্রিশ দিন বই হাতে করিয়া দিন কাটাইতে হইবে বৎসরে । পিতৃমৃত্যুতে স্বাধীনতার আস্বাদ পাইয়া এই দীর্ঘকাল বন্দী অবস্থায় কি কাটান যায় ! মনে করিতেও দম বন্ধ হইয়া উঠিত ! ইগর উপর, আমার উপর ক্লাশের ছাত্র-বন্ধুরা চোখে আঙ্গুল দিয়া দেখাইয় দিলেন যে, কেমিক্যাল সাহেব মাস্থ্য গড়িবার ছলে আমাকে বাদর বানাইবার চেষ্টায় আছেন ; তখন আর আমাকে পায় কে ? নিজেকে মানুষ করিয়া তুলিবার ভার নিজের হাতে লইয়া মাস কতক যাইতে না যাইতেই স্কুল ত্যাগ করিলাম। আবাল্য আমি ‘স্বদেশী ’ দুধে-দাত বোধ হয় তখনও আমার সব ভাঙ্গে নাই, যখন আমি সদলবলে দোকানীদের বিলাতী কাপড় পুড়াইয়া জাসিয়াছি। এ বার স্কুল ছাড়িয়া রীতিমতভাবে বিপ্লবপন্থী হইয়া পড়িলাম । কিন্তু এমন গোপন কথাও কেমিক্যাল সাহেবের নিকট গোপন রহিল না । কি করিয়া যে এ খবর র্তাহার কানে পৌছিল, তাহ এখনও পর্য্যস্ত আমার নিকট রহস্তপুর্ণ। ইচ্ছাশক্তির এ কোনরূপ অবিদিত ক্রিয়া না কি ? কে জানে ? কিন্তু অামার খবরকে ধরা আর আমাকে ধরা ত আর. এক কথা নয়। র্তাহার চিঠি বহুবিহিতে ডাকপিয়নের জুতায় তলাটাকে ক্ষয়রোগে ধরিল, শিকলকাটা মুক্ত পাখী আমি, কিন্তু তবু তাহাকে ধরা দিতে চাহিলাম না । না চাহিলে কি হয়— ? দৈৰ ষে স্বয়ং ক্ষমতার অধীন, ইচ্ছাশক্তির দাস هi-oه ২৩৩ আমরা যদি শুধু এই সত্যটুকুর মর্য্যাদা রক্ষা করিয়া চলিঙ্গে জানিতাম, তাহা হইলে ভারতের ভাগ্যলিপি উন্টাইয়া যাইত। যাক। ধরা না দিয়াও একদিন.আমি ধরা পডিয়া গেলাম । তখন বেলা ২টা, আমি শুামবাজার হইতে ট্রামে ভবানীপুর যাইতেছিলাম, কলেজ ষ্ট্রীটের মোড়ে দেখিলাম, এক জন হাটকেণধারী সেই গাড়ীর দিকে দ্রুতপদে চলিয়া আসিতেছেন । কে ও কেমিক্যাল সাহেব ত নন ? হইতেও পারেন তিনি, এই সময় লেক্চার শেষ করিয়া ८कांन cकांन निन वांख्नेौ गांन । श्रांद्र ठेक ७ठे সময়েই কি না আমি চৌরঙ্গীর ট্রামে চড়িয়া বসিলাম কি হর্বদ্ধি আমার! আপশোযট। লজ্জায় এবং সনেহে সত্যে পরিণত: করিয়া কেমিক্যাল সাহেবের পাছট গাড়ীর পাদানীর উপর যখন চড়িল, তখন আমায় বুকটা দুরু হুরু করিয়া কাপিয়া উঠিল ; ইচ্ছা হইল, গাড়ী হইতে লাফাইয়া পডিয়া এ লজ্জাভয় নিবারণ করি ; কিন্তু তৎপূৰ্ব্বেই সাহেব আমার নিকটে আসিয়া দাড়াইয়া ‘হীল্লেী’ বলিয়া হাত বাড়াইয়া দিলেন। তাতার স্বয়ে তাহার সমস্ত মুখে কি আনন্দ-স্ফূৰ্ত্তি । সেই আনন্দধারা আমার লজ্জামুতাপপূৰ্ণ মনকেও বেশ একটু আর্দ্র করিয়া তুলিল, বিস্মৃত অনুরাগ-ঐতি আমার ইচ্ছাকে উপেক্ষা করিয়া ধীরে ধীরে আমাকে অভিভূত করিয়া ফেলিল । 廳 懒 来源 * সাহেব বলিলেন—মৰ্ম্মাত্মিক অনুনয়পূর্ণ স্বরে বলিলেন, “তোমার পিতার কাতর মৃত্যুবাণী আমি যে কিছুতেই ভুলতে পারিনে, তুমি স্কুল ছেড়ে গিয়ে পর্য্যস্ত আমার মনে শাস্তি নেই। কথা রাখ নবকুমার, স্কুলে আলীর ভৰ্ত্তি হও - জীবনটা নষ্ট কোরো না – তোমার প্রতিভাশক্তির বিকাশ কর ।” বলিয়া এক মুহুৰ্ত্ত নীরব হইয়৷ রছিলেন ; তাহার পর শক্তি সংগ্ৰহ করিয়া যেন বলিলেন—— *ও পথ ছাড় নবকুমার, ওতে দেশেরও মঙ্গল নেই, তোমারও মঙ্গল নেই, প্রকৃত উপদেশ শোন, ও পথ ছাড় । অtযার পড়াশুনা ধর ।” র্তাহার কাতরতার মনটা বড়ই নরম হইয়া গেল, বলিতে লজ্জ করে—আমার চোখ দুটা জলে ভরিয়া উঠিল । আমি আন্তরিকভাবে